একটি মামলায় রায় সামনে রেখে সরকার কেন এতো অস্থির?

অবস্থা এখন এমন যে, অন্য কোনো কিছুতেই লক্ষ্য রাখার সময় সরকারের নেই। লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-এজেন্ডা এই মূহূর্তে একটিই, সেটি বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার রায়। আগামী বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে। অনেক আলোচিত মামলার রায় ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি। কিন্তু এখন যে অবস্থা, তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি কখনো।

সতর্কতার পর বাড়তি সতর্কতা
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রীবর্গ বারে বারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সবোচ্চ ও সর্বাত্মকভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন। পরে আবার শুধু সতর্কতামূলক নয়, বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকের পর বৈঠক হচ্ছে প্রতিদিনই। নির্দেশের পর নির্দেশ আসছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক। আদালত ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আবার বেশি করে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

"অনাকাঙ্খিত ঘটনা" কারা কিভাবে ঘটাতে পারে?
সরকার বলছে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে এতোসব আয়োজন। অনাকাঙ্খিত ঘটনা মানে কি নাশকতার আশঙ্কা? স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আজ সেটা প্রথমেই নাকচ করে দিয়েছেন। তাহলে কি অনাকাঙ্খিত ঘটনা মানে বিএনপি-জামাতের সম্ভাব্য অপতৎপরতা? তাও তো মনে হয় না, যেখানে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেই দিয়েছেন, তারা রায় মেনে নেবেন। ওদিকে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে জামায়াত আছে ভয়ের মধ্যে। এই লেজেগোবরে অবস্থায় তারাই বা সরকারকে চটাতে যাবে কেন? তাহলে কি অনাকাঙ্খিত ঘটনা মানে ফ্রিডম পার্টির ভয়? কে না জানে, রাজনৈতিকভাবে ফ্রিডম পার্টির কোনো ভিত্তিই নেই। ঢাকায় নামমাত্র একটি কমিটি ছাড়া দেশের কোথাও কাগুজে ওই দলটির কোনো অস্তিত্ব আছে বলে জানা নেই। তাছাড়া মামলার আসামিদের পুত্র-কন্যা-ভাইপো-নাতনি সবাইকে তো ইতিমধ্যে জেলে ঢোকানো হয়েছে, এমনকি মেহনাজের শিশুকন্যাটিকেও। তাহলে সরকার ও আওয়ামী লীগে এই অস্বাভাবিক অস্থিরতার কারণ কী? "অনাকাঙ্খিত ঘটনা" তাহলে কারা কিভাবে ঘটাতে পারে? সম্ভাব্য সব বিকল্প যাচাই-বাছাই শেষে আর বাকি থাকে বাংলাদেশের মানুষ, আমজনতা। তাহলে কি জনতার ভয়?

রায় কী হবে, সেটা যেন তারা জানে
বেশ অনেকদিন ধরেই সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, আগামী বৃহস্পতিবার রায় কী হবে সেটা তারা জানে। এটর্নি জেনারেল সংবাদমাধ্যমে এমন কিছু কথা বলেছেন, তাতে যে কারোরই মনে হবে, আপিলের রায় যেন তারাই তৈরি করে দিচ্ছেন। সেটাই যেন বৃহস্পতিবার ঘোষিত হবে! বিএনপি মহাসচিব ইতিমধ্যে এর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, "অ্যাটর্নি জেনারেল ও সরকারি আইন কর্মকর্তারা যেভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ের বিষয়ে আগেই চূড়ান্ত ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার পরিপন্থী।"
আমরা এতে একদিকে বিচার বিভাগের প্রতি সরকার ও সরকারের আইন কর্মকর্তার অসম্মান দেখতে পাই, সঙ্গে দেখি ক্ষমতার দম্ভ ও পেশীশক্তির প্রদর্শনীও। 


Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply