ভারতজুড়ে ছড়িয়ে যাওয়া সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের একটি ভয়াবহ নমুনা

মুম্বাইয়ের গুরু নানক কলেজের ছাত্রী উনিশ বছরের ইশরাত জাহান এবং তিন যুবক- ধর্মান্তরিত হওয়া জাভেদ শেখ, পাকিস্তানি নাগরিক আমজাদ আলী রানা এবং জিশান জওহর। সকলেই মুসলমান ধর্মাবলম্বী।
২০০৪ সালের জুনে আহমেদাবাদের উপকণ্ঠে এই চারজনকে খুন করে গুজরাট পুলিশ। অভিযোগ, তারা সন্ত্রাসবাদী। পুলিশের ভাষ্যমতে, গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ওই চার 'সন্ত্রাসী' মহারাষ্ট্র থেকে এসেছিল। সেভাবেই প্রচার চলছিল এতদিন।

সম্প্রতি আহমেদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এসপি তামাং বছরপাঁচেক আগেকার সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছেন তার ২৪৩ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে। বস্তুত ভারতের অধিকাংশ লোকই জানতেন, পুলিশের তোলা অভিযোগ পুরোটাই এক গল্প। এসপি তামাংয়ের প্রতিবেদন সাধারণ মানুষের ধারণাকেই প্রামাণ্য রূপ দিল। প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো সাধারণ এনকাউন্টারের কাহিনী নয়, একে বলা যায় ভারতজুড়ে ছড়িয়ে যাওয়া সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের একটি ভয়াবহ নমুনা।

এসপি তামাং তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ওই হত্যাকাণ্ডে গুজরাটের বিখ্যাত এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট ডিজে ভানজারা সরাসরি জড়িত ছিলেন। এই সেই ভানজারা, আরেক মুসলিম ধর্মাবলম্বী সোহরাব উদ্দিন ও তার স্ত্রীকে ফেইক এনকাউন্টারে হত্যার দায়ে যিনি এর আগে অভিযুক্ত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ জুন ইশরাত জাহানসহ তিন মুসলমান যুবককে মুম্বাই থেকে অপহরণ করে পুলিশ। সেখান থেকে তাদের নিয়ে আসা হয় আহমেদাবাদে। দুদিন ধরে চলে অত্যাচার। পুলিশ যদিও প্রচার করছে, ওরা ১৫ জুন মারা গেছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট তামাং তার প্রতিবেদনে নিশ্চিত করে বলেছেন, পুলিশ হেফাজতেই তাদের হত্যা করা হয় ১৪ জুন সন্ধ্যা থেকে রাতের কোনো এক সময়ে। হত্যার পর শহরের উপকণ্ঠে মৃতদেহগুলো রেখে আসা হয় ভোরের আলো ফোটার আগে। একে-৫৬সহ কিছু অস্ত্র সাজিয়ে রাখা হয় মৃতদেহগুলোর আশেপাশে, যাতে সবাইকে বিশ্বাস করানো যায় যে, এরা আসলেই সন্ত্রাসী ছিল। গুজরাট পুলিশ যথারীতি সেভাবেই ঘটনাটির প্রচার চালায়। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সেই সুরে গলা মিলিয়ে জানায় যে, এই চার 'সন্ত্রাসী'র সঙ্গে লস্কর-ই-তৈয়বার যোগাযোগ ছিল।

ম্যাজিস্ট্রেট তামাং নিশ্চিত করেছেন, ব্যক্তিগত কারণ ছাড়াও পদোন্নতি এবং নরেন্দ্র মোদীর অনুগ্রহ পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। তামাং তাঁর রিপোর্টের দু পৃষ্ঠা জুড়ে উল্লেখ করেছেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের নামও। বিস্ময়কর হল এই যে, সন্ত্রাসবাদী মুসলমান মারার কৃতিত্বস্বরূপ নরেন্দ্র মোদীর গুজরাট সরকার এদের প্রত্যেককেই পদোন্নতি দিয়েছে ঘটনার পরপরই!

বাংলাদেশে বরং অনেক ভালো আছি হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মিলে।

সংযুক্তি
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): ভারতহিন্দুজঙ্গিIndiathe hindu ;

প্রথম প্রকাশ

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply