সিংহ ধরার সহজ পদ্ধতি

[পূর্ণ রেজ্যুলেশনে দেখার জন্য ছবির ওপর ক্লিক করুন]
সিংহ বনের রাজা। যার ভয়ে পশুপাখি একঘাটে জল পান করে। সেই সিংহ ধরা সহজ কোনো কাজ নয়। আবার কঠিনও কিছু নয়, যদি নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেন।

নিউটন পদ্ধতি
প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই সূত্রটুকু মনে রাখলে সিংহ ধরা আপনার জন্য কঠিন কিছু নয়।

আইনস্টাইন পদ্ধতি
সিংহ যেদিকে অবস্থান করছে, তার ঠিক বিপরীত দিকে দৌড়াতে থাকুন। সিংহ যেহেতু সহজাত ক্ষিপ্রগতির অধিকারী, সুতরাং সিংহও দ্রুত দৌড়াবে এবং ক্লান্তও হবে তাড়াতাড়ি। এ সুযোগে এবার আপনার শিকার ধরার পালা।

সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদ্ধতি
প্রথমে একটি বিড়াল ধরুন। এরপর দাবি করুন, বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর আপনি প্রমাণ পেয়েছেন, ওটা আসলে একটি সিংহ। এরপর যদি কেউ ব্যাপারটা নিয়ে লেগেই থাকে, তাহলে তাকে জানিয়ে দিন যে বিড়ালটিকে আপনি সিংহ হিসেবে আপগ্রেড করবেন সামনে।

পুলিশ পদ্ধতি
যেকোনো একটি প্রাণী ধরে আনুন। এরপর সেটাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুন। জিজ্ঞাসাবাদে ততক্ষণ পর্যন্ত মারধর চালাতে থাকুন, যতক্ষণ ওই প্রাণী নিজেকে সিংহ হিসেবে স্বীকার করে না নেয়।

ঢাকাই সিনেমা পদ্ধতি
কে না জানে, এফডিসি হচ্ছে ঈশ্বর-প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতাশালী লোকদের মিলনকেন্দ্র। মানুষ থেকে সাপ ও সাপ থেকে মানুষে রূপান্তরিত হতে পারে—এমন দুজন মহামানব ও একজন কুংফু মাস্টার খুঁজে নিতে হবে। প্রথম দুজন সাপের বেশে বনে ঢুকে সিংহের মুখোমুখি দাঁড়াবে। কিঞ্চিৎ ধস্তাধস্তির পর সাপের দংশনে সিংহ অজ্ঞান হয়ে পড়বে ঠিক, তবে মরবে না। শেষ খেলা খেলতে আসমান থেকে একলাফে সিংহের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে সেই কুংফু মাস্টার। সিংহ-মানুষে লড়াইয়ের একপর্যায়ে হঠাৎ সিংহের মূত্রথলি থেকে একটি ক্যাসেটের কিছু ফিতা বেরিয়ে পড়বে। তা দেখে হতবাক হবে কুংফু মাস্টার। কারণ, তার পকেটেও যে একটি ক্যাসেটের কিছু ফিতা পরম যত্নে রাখা। লড়াই থামিয়ে সিংহ আর কুংফু মাস্টারের ফিতা জোড়া দিয়ে বাজানো হবে—ছোটবেলায় মা-বাবার গাওয়া অবিকল সেই গান। দুজনের চোখেই জল নামবে—এ যে আপন দুই ভাই! আজ থেকে ২০ বছর আগে দুই ভাই পৃথক হয়ে গিয়েছিল কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রে, শুধু ছিল ক্যাসেটের ভাঙা দুটি অংশ। এই দৃশ্য দেখে অপেক্ষমাণ সর্পদ্বয় শেষ অস্ত্র আসমানি রশ্মি দিয়ে সিংহকে মেরে ফেলবে, সঙ্গে কুংফু মাস্টারকেও। অবশেষে জয় হবে সত্যের।

ডিপজল পদ্ধতি
সিংহকে স্রেফ সতর্ক করে দিন, যেকোনো সময় আপনি তাকে ধরতে পারেন। সতর্কবাণী শুনে আতঙ্কিত সিংহ ভয়েই মারা যাবে যথাশিগগির।

চিত্রপরিচালক পদ্ধতি
সিংহটিকে নিয়ে যান নেপাল কিংবা থাইল্যান্ডে। সেখানে অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যসংবলিত মনোরম পরিবেশে ওটাকে মেরে ফেলুন।

আর্টফিল্ম পদ্ধতি
প্রথমে নিশ্চিত করুন, সিংহটি যেন সূর্যের আলো না পায়। সিংহটিকে একটি অন্ধকার কক্ষে রাখুন, একপাশে শুধু মোমবাতির মৃদু আলো জ্বলবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে অথবা সিংহের কানের কাছে উঁচু লয়ে উচ্চাঙ্গসংগীত বাজবে। স্বাভাবিকভাবেই সিংহ প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়বে এবং অচিরেই অসহ্য জ্বালা থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেবে।

প্যাকেজ নাটক পদ্ধতি
একটি সিংহীকে বনের ভেতরে পাঠান। সিংহ আর সিংহী দ্রুতই একে অপরের প্রেমে পড়বে। ঠিক তখনই আরও একটি সিংহীকে বনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিন, যা অন্য একটি সিংহের প্রেমে পড়বে। প্রথম সিংহ প্রথম সিংহীকে ভালোবাসে, দ্বিতীয় সিংহ দ্বিতীয় সিংহীকে। কিন্তু দ্বিতীয় সিংহী আবার দুটো সিংহকেই ভালোবেসে ফেলে। ঘটনার এ পর্যায়ে তৃতীয় আরেকটি সিংহীকে বনের ভেতরে পাঠান।...কী, আপনি কি কাহিনি বুঝতে পারছেন না? ঠিক আছে, ১৫ বছর পর এই অংশটুকু আবার পড়ুন, তখনো আপনি এই কাহিনি বুঝতে পারবেন না!

এনজিও পদ্ধতি
সিংহটিকে প্রথমে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করুন। এরপর সেটাকে ক্রমাগত পুষ্টিকর হরলিকস/ওভালটিন খাওয়াতে থাকুন, যতক্ষণ না সেটা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সিংহকে ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহক/উপকারভোগী করার মাধ্যমেও ধীরে ধীরে মেরে ফেলা সম্ভব।

সরকারদলীয় পদ্ধতি
সুন্দরবনের সিংহকে টেকনাফের গ্রেনেড হামলা মামলায় অন্যতম প্রধান আসামি করে ফেলুন। এরপর বড়জোর ১০ দফা রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হলে সিংহের বাঁচার খুব বেশি আশা থাকে না।

বিরোধীদলীয় পদ্ধতি
প্রথমে একটি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকুন। বিকেলের দিকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বনের ভেতরে ভাঙচুর শুরু করুন। ভাঙচুরের একপর্যায়ে সিংহকে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলুন।

ছাত্রলীগ পদ্ধতি
ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপকে কায়দা করে বনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই রড-চাপাতি-কিরিচ-বল্লম নিয়ে কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর পুরো বনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। সাধারণ পশুপাখিরা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকবে। এর একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীদের বেধড়ক পিটুনিতে ঘটনাস্থলেই সিংহ প্রাণ হারাবে। প্রাণহানির প্রতিবাদে যদিও দুই গ্রুপই বনের ভেতরে পৃথকভাবে মহড়া দেবে, তবে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

বারাক ওবামা পদ্ধতি
ওসামা বিন লাদেনের সহযোগী সাব্যস্ত করে সিংহটিকে প্রথমে পাকিস্তানে নিয়ে যান। পরে সেখানে ড্রোন হামলা চালিয়ে সিংহটিকে হত্যা করুন। 
 

সংযুক্তি :
ই-প্রথম আলো  |  প্রথম আলো ওয়েব
প্রকাশকাল : ২০-০৬-২০১১

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply