শাহী মির্জা, আমরা আছি তোমার পাশে

রুদ্বশ্বাস নানা ঘটনার পর শাহী মির্জা গ্রেপ্তার হল। গত ডিসেম্বরে নিজেদের ওয়েবসাইট হ্যাকড হওয়ার পরও র‌্যাব সেই ঘটনা বেমালুম চেপে গিয়েছিল। কিন্তু এবার, দ্বিতীয় দফা হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর, চেপে যাওয়া আর সম্ভব হয়নি। ঘটনা সম্পর্কে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সংবাদ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে আগেই। ব্লগের যে শক্তি কিংবা প্রভাব- এ ঘটনা থেকে তারও খানিকটা আঁচ পাওয়া গেল। র‌্যাবের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি সর্বপ্রথম এসেছে সামহোয়্যারইনআমারব্লগে, ঘটনার পরপরই। আমার জানামতে, ব্লগের সূত্র ধরেই বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর সংবাদটি পরিবেশন করে। পরে অন্যান্য পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু বিষয়ে ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি-

হ্যাকার কেন ধরা পড়ল?
সাইবার অপরাধ দমন আইনের অসংলগ্নতা নিয়ে বাংলাদেশে নিশ্চয়ই কখনো মিছিল হবে না, শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই কখনো বিবৃতি দেবেন না- একথা কে না জানেন! এই যখন অবস্থা, এই যখন বাংলাদেশের চিরপরিচিত দৃশ্য- প্রযুক্তি অনুরাগী তরুণরা তখন এগিয়ে এসেছে তাদের দাবি নিয়ে। তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে। র‌্যাবের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ওয়েবসাইট হ্যাকের মতো পথ না ধরে তারা আর কিভাবে এ দাবি জানাতে পারতো? মিছিল থেকে একটি ঢিল ছোঁড়া হবে না- তা কি কল্পনা করা যায়? শাহী মির্জা তার একলা মিছিল থেকে একটি ঢিল ছুঁড়ে জানান দিতে চেয়েছে তার দাবির কথা।
সে অর্থে পুরো ঘটনায় র‌্যাবের তেমন কোনো কৃতিত্ব নেই। তাহলে শাহী মির্জা কেন ধরা পড়ল? উত্তরটি আসলে সহজ- সে ধরা পড়তে চেয়েছে।

মির্জা কি অপরাধী?
শাহী মির্জাকে অপরাধী ভাবাটা ভুল হবে। এ ঘটনা থেকে আর্থিকভাবে সে লাভবান হয়নি। সেরকম কোনো ইচ্ছাও তার ছিল না। চাইলে সে র‌্যাবের ওয়েবসাইটে পর্নো আপলোড করে দিতে পারতো। কিন্তু মির্জা সেটি করেনি। তার একটি দাবি ছিল। সে দাবির কথাই সে জানান দিতে চেয়েছে।

র‌্যাবের দায়দায়িত্ব

সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ওয়েবসাইটে যে ভঙ্গুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা- একুশ বছর বয়সী শাহী মির্জা সেটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কানেক্টবিডি নামের যে প্রতিষ্ঠান র‌্যাবের ওয়েবসাইট দেখাশোনার জন্য প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে হাপিস করে দিচ্ছে, বিনিময়ে তারা কী নিরাপত্তা দিচ্ছে, তার নমুনা তো আমরা দেখলামই শাহী মির্জার কল্যাণে। এ ঘটনায় শাস্তি হলে হওয়া উচিত কানেক্টবিডির, হওয়া উচিত র‌্যাবের আইটি উইংয়ের নির্বোধ কর্মকর্তাদের।
জনগণের স্পর্শকাতর তথ্য নিয়ে ইন্টারনেটের বিপজ্জনক সমুদ্রে ছিনিমিনি খেলার জন্য র‌্যাবের উচিত- জনগণের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা।
র‌্যাব তাদের ওয়েবসাইটে এখনো ডাটাবেজ পুনঃস্থাপন করতে পারেনি। শাহী মির্জা গ্রেপ্তার হওয়ার পরও গুরুত্বপূর্ণ ডাটাবেজটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

হ্যাকাররা কি তাহলে দমে যাবে?
এ ঘটনায় হ্যাকাররা দমে যাবে, হ্যাকিং বন্ধ হয়ে যাবে- এটা ভাবা ঠিক হবে না।
আন্ডারগ্রাউন্ড সাইটগুলোতে এ ঘটনা ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে। বিদেশের অনেক হ্যাকারই এ ঘটনা সবিস্তারে জেনেছে। অনলাইন ডিসকাশনে কোনো কোনো বিদেশী হ্যাকারের অংশগ্রহণ থেকে এটা বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের সাইট নিয়ে তাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে। ফলে এখন থেকে ডাকসাইটে বিদেশী হ্যাকাররা যদি সরকারি কিংবা বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ওয়েবসাইটে হামলা চালায়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আমরা আছি তোমার পাশে

শাহী মির্জা, আমরা আছি তোমার পাশে। একুশ বছর বয়সী এই অমিত সম্ভাবনাময় তরুণের মুক্তির জন্য এগিয়ে আসুন সকলেই।

প্রথম প্রকাশ  |  দ্বিতীয় প্রকাশ

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply