৬ কারণে বসুন্ধরার কালের কণ্ঠ দাঁড়াবে অথবা দাঁড়াবে না

[পূর্ণ রেজ্যুলেশনে দেখার জন্য ছবির ওপর ক্লিক করুন]
বাজারে এল বসুন্ধরার মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। এর মধ্য দিয়ে এই প্রথম প্রথম আলোর একাধিপত্য খর্ব হওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এমনিতে মনোপলি বা একাধিপত্য যে কোনো কিছুর ক্ষেত্রেই খারাপ এবং সার্বিকভাবে ক্ষতিকর। এছাড়া আমরা দেখছি, কালের কণ্ঠে এখন বহু সাংবাদিক ৭০-৮০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। অনেকে গাড়িও পেয়েছেন। বসুন্ধরার প্রলোভনের মুখে মেধাবী সাংবাদিকদের ধরে রাখতে প্রথম আলোও তাদের অনেক সাংবাদিকের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে কিংবা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। যুগান্তর এবং সমকালও সাংবাদিক ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সার্বিকভাবে এ ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই উল্লেখযোগ্য এক উত্তরণ ঘটেছে বলা যায়।

যে কারণে কালের কণ্ঠ দাঁড়াবে
১. মিডিয়ায় এসেও কালো টাকার মালিক ও দুর্নীতিবাজরা সফল হয়েছে- এমন উদাহরণ অনেকই আছে। যেমন যুগান্তরের নুরুল ইসলাম বাবুল, আমার দেশ-এনটিভি-আরটিভির মোসাদ্দেক আলী ফালু। সেদিক থেকে দুর্নীতিবাজ ও ভূমিদস্যু হিসেবে বিশেষ পরিচিত বসুন্ধরার শাহ আলমও অসফল হবেন- এটা বলা যায় না। সবচেয়ে বড়ো কথা, গণমাধ্যমে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড়ো বিনিয়োগটি হয়েছে কালের কণ্ঠে। এই বিনিয়োগের জোরে কালের কণ্ঠ দাঁড়িয়ে যেতে পারে। যদিও মনে রাখা দরকার, এইরকম বিশাল বিনিয়োগ নিয়েও বেক্সিমকোর মুক্তকণ্ঠ দাঁড়াতে পারেনি।
২. প্রথম আলো যে মানে পৌঁছে গেছে, যে বিশাল পাঠকগোষ্ঠীর অধিকারী হয়েছে, কালের কন্ঠের পক্ষে তাতে চিড় ধরানো কঠিন হবে। তবে যুগান্তর, সমকালের মতো তুলনামূলক মধ্যপন্থী দৈনিকগুলোর সার্কুলেশনে হানা দেওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে কালের কণ্ঠের। সেক্ষেত্রে আগামী এক বছরে কালের কণ্ঠ হয়ে উঠতে পারে দ্বিতীয় প্রধান দৈনিক। বিশেষ করে প্রথম আলো বিরোধীদের আশ্রয় হয়ে উঠতে পারে শাহ আলমের দৈনিকটি।

যে কারণে কালের কণ্ঠ দাঁড়াবে না
১. কালের কণ্ঠের মূল সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, সরকারবিরোধী অবস্থান তারা নিতে পারবে না। সেটা হোক আওয়ামী লীগ সরকার কিংবা বিএনপি। সরকারের সমালোচনা করা পত্রিকাটির পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ প্রতিটি মন্ত্রণালয়েই বসুন্ধরা ও তার মালিকদের হাত-পা বাঁধা। তাছাড়া পত্রিকাটি প্রকাশের পেছনে সরকারের একটি অংশের সমর্থন আছে বলেও বাজারে গুঞ্জন আছে। একই কারণে সরকারি-বেসরকারি দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে। রাখঢাক রেখে যদি প্রকাশ করেও সেটা কতোটুকু পাঠক-সন্তুষ্টি অর্জন করবে, সেটা এক বড়ো প্রশ্ন।

২. সরকার-সমর্থক, দলীয় কিংবা তুলনামূলক নমনীয় পত্রিকা বাংলাদেশে সাধারণত জনপ্রিয় হয় না। বাংলার বাণী ঘরে ঢুকে গেছে বহু আগে, তারেক রহমানের মালিকানাধীন দৈনিক দিনকাল পুরো ঢাকায় ৫০০ কপি চলে কিনা সন্দেহ, জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পুরো দেশেই টেনেটুনে কয়েক হাজার মাত্র চলে, প্রচুর ভর্তুকি দিয়েও জামায়াত সমর্থক দৈনিক নয়া দিগন্ত কিংবা আওয়ামী লীগ সমর্থক ভোরের কাগজের অবস্থা সঙ্গীন। অন্যদিকে কট্টর সরকারবিরোধী অবস্থানের কারণে বিএনপি সমর্থক আমার দেশের সার্কুলেশন সাম্প্রতিককালে বেড়েছে।

৩. প্রথম আলো তাদের পাঠকদের ধরে রাখতে সামনে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে। যেমন, শীঘ্রই এমন সময় আসছে, প্রথম আলো মুদ্রিত হবে বিভাগীয় শহরগুলোতে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঠক ভোরবেলাতেই প্রথম আলো হাতে পেয়ে যাবে। তখন আঞ্চলিক পত্রিকা তো বটেই, এমনকি জাতীয় দৈনিকগুলোও মার খেয়ে যেতে পারে। বিভাগীয় শহরগুলোতে পত্রিকা মুদ্রণের সাধ্য ও সামর্থ্য দৃশ্যত আর কোনো পত্রিকার নেই।

৪. কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কালের কণ্ঠ ইতিমধ্যে আর সব পত্রিকাকেই ছাড়িয়ে গেছে। বহু মত-পথের সাংবাদিকরা উচ্চবেতনে এখানে এসে মিলিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হচ্ছে, যথার্থ সমন্বয় ঘটানো। সাম্প্রতিক খবরাখবর থেকে জানা যাচ্ছে, সমন্বয়ে ছন্দপতন ঘটতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। তাছাড়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সাংবাদিক অধুনা ধরাশায়ী যায়যায়দিনে ছিলেন। সেখানে তারা কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধারায় চার পৃষ্ঠার খেলার পাতা কিংবা রঙচঙা সাময়িকী দিয়ে আদৌ পাঠকের মন ভরানো যাবে কিনা- সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নির্বিষ পত্রিকা চলে কি আসলে?



প্রথম প্রকাশ

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply