ঈদ উৎসবের ঝক্কিঝামেলা ও সম্ভাব্য পরিকল্পনা

ইঙ্গ-মার্কিন জোট ইরাক আক্রমণ করেছে। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে তার আঁচ লাগল বাংলাদেশের পত্রিকাপাড়ায়ও। বড়োসড়ো টিম নিয়ে রীতিমতো আলাদা সেকশন তৈরি হল- যারা ইরাকযুদ্ধ নিয়ে রিপোর্ট লিখবে, ব্যাখ্যা উপস্থাপন করবে, ঘটনা বিশ্লেষণ করবে- আরো কতো কিছু। পত্রিকা প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠা তো বটেই, অন্যান্য পৃষ্ঠাও প্রায় দখল করে রাখল ওই যুদ্ধ- দিনের পর দিন। পাঠক আগ্রহ বলে কথা! আমার হল কী, লক্ষ্য করলাম খবরগুলো আমাকে টানছে না কিছুতেই। অবচেতনে এড়িয়ে যাচ্ছি যুদ্ধের খবরাখবর। এমন নয় যে, আমি যুদ্ধবিরোধী। শেষমেশ ফলাফল দাঁড়াল এমন যে, ইরাকযুদ্ধ সম্পর্কে আমি মোটামুটি মূর্খ হয়ে উঠলাম। তবু চেতনা এল না। এই সেদিনের কথা- হাসিনা-খালেদার গ্রেপ্তার নিয়ে দেশজুড়ে মাতামাতি। আমি খবরের ইন্ট্রোটা পড়ে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিরোনামটা, অন্য দিকে মনোনিবেশ করি। আসলে যেখানেই হাউকাউ, যেখানেই মাতামাতির অতিমাত্রা- আমি সেখানে নেই। বোধকরি ছিলামও না কখনো।

ঈদের মতো উৎসবগুলোও আমাকে তেমনভাবে কখনোই আলোড়িত করে না। আবার কাউকে আলোড়িত করলে, তাতেও বিরক্ত হই না। যে যেভাবে আনন্দ পায়, পাক। তারপরও যেহেতু নশ্বর এই বাংলাদেশে বহাল তবিয়তে আছি, বাস্তবতা তো সহ্য করতেই হবে।

পূর্ব-অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া বাস্তবতাসমূহের মধ্যে রয়েছে-

১. টেলিভিশনে ঘন ঘন রমজানের ঐ রোজার শেষে.... গানটি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হবে। সন্ধ্যার পর থেকে প্যাকেজ নাটকের নামে চোখের ওপর মাত্রাহীন অত্যাচার চলবে।
সিদ্ধান্ত : টিভি যদি খোলা হয়ও, ভুলেও এটিএনের দিকে যাবো না। আমার একটু ইভা রহমানভীতি আছে। চ্যানেল আইতে আবার কেকা ফেরদৌসী নামের একজনের উৎপাত মনে বড় কষ্ট দেয়। সো, ওইটাও বাদ।

২. ঈদ মৌসুমে পর্যটন স্পটগুলাতে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছি। কারণ ঈদের ছুটিতে এইসব জায়গায় ঢাকা নিবাসীরা বাধ্যতামূলকভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। বেশিরভাগই প্রকৃতিপ্রেমিক সেজে যত্রতত্র কোকাকোলার বোতল ফেলবে।
সিদ্ধান্ত : গতবার গিয়েছিলাম পার্বত্য রাঙামাটির সাজেকে। সেখানে পর্যটকের উপদ্রব নেই। এবার সে রকম জায়গা এখন পর্যন্ত খুঁজে পাইনি।

৩. ঘরে ঘরে গিয়ে কদমবুচি পেশ করার পুরনো রীতিটা এখনো বহাল আছে। ভাবতেই শিউরে উঠছি। ঈদের দুই দিনে চোখে সুরমা দিয়ে সততার প্রতিমূর্তি সেজে ঘুরঘুর করা যুবকদের এমনিতেই সচেতনভাবে এড়িয়ে চলি। তবে মূলত তাদের কারণেই কদমবুচির বদভ্যাসটা এখনো বহাল আছে। এর অন্যথা হলে 'বেয়াদব' উপাধি পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
সিদ্ধান্ত : আধঘন্টার আঁটসাঁট প্যাকেজে একসঙ্গে কদমবুচি সেরে নেওয়া যায় কিনা দেখতে হবে।

৪. সিনেমা দেখা যেতে পারতো। তবে বাংলা সিনেমা গলাধকরণের শক্তি ও ধৈর্য কোনোটাই নেই। তার মানে এই নয় যে, রুচিবোধ বেয়ে বেয়ে পড়ছে আমার শরীর থেকে। প্রকাশ্যে কবুল করতে দ্বিধা করি না যে, আর্টফিল্ম আমার হজম হয় না। তাহলে মাঝখানে কী পছন্দ তোমার, হে? যেহেতু মাঝখানের পছন্দটা এখনো বুঝে উঠতে পারি নাই, সুতরাং সিনেমার লাইনও বাদ।
সিদ্ধান্ত : এই চিন্তা ভুলেও মাথায় আনা চলবে না।

৫. ঈদের দুই দিন মোবাইল একটা স্পেশাল যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়ায়। মিনিটে মিনিটে টেলিফোনিক শুভেচ্ছা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুভেচ্ছামিশ্রিত ফোনের জবাবে হু হ্যাঁ করে সময় পার করতে হয়। খুবই কৃত্রিম এবং হাস্যকর এসব ব্যাপার-স্যাপার। সহ্য করার ধৈর্য থাকে না।
সিদ্ধান্ত : মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে। আর জিমেইলে একটা ফিল্টার তৈরি করতে হবে- যাতে শুভেচ্ছা বাণীসমূহ একটা ফোল্ডারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢুকে যায়। 

Tags:

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply