মন খারাপের মেঘ : আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে!

পরশু ফোন করেছিলেন কয়েকজন। গতকাল সাক্ষাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এক সহকর্মীও। আর আজ এক বন্ধুর ফোন পেয়ে কিছুটা বিস্মিত হই । ক্ষোভ ঝরছে আমার ওপর- বুঝতে পারি টেলিফোনের অপর প্রান্তে থেকেও। সেদিন লন্ডনপ্রবাসী এক অতিচেনা ব্লগার মেসেঞ্জারে বলছিলেন, আপনি একটু সাবধান থাইকেন। আপনার তো আর শত্রুর অভাব নেই।
একুশ বছর বয়সী এক তরুণের পক্ষে আমার গোঁয়ার্তুমি, যা সরাসরি র‌্যাবের মতো একটি প্রতাপশালী সংস্থার বিরুদ্ধে যাচ্ছে- এই বিষয়টা আমার শুভাকাঙ্খীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমার পোস্টগুলো দেখে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন,  আমাকে এমনকি গ্রেপ্তারও বিচিত্র কিছু নয়। কারণ ছদ্মনামে লিখলেও আমার অবস্থান চিহ্নিত করা এ এমন কঠিন কিছু নয়। বরাবরের মতোই আমি সবার সব আশঙ্কা হেসে উড়িয়ে দেই। যতোক্ষণ শ্বাস, ততোক্ষণ আঁশ- আমি লিখবোই। 'আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে!'

মন খারাপের মেঘ
এর মধ্যে মন খারাপ হওয়ার মতো কিছু ব্যাপার দেখলাম ব্লগে, কারো কারো পোস্টে। আরিফ জেবতিক এবং আরো কেউ কেউ খুব আপত্তিকর একটা কাজ করে ফেলেছেন। শাহী মির্জার পক্ষে অশ্রু ফেলতে গিয়ে তারা দুঃখজনকভাবে একুশ বছরের তরুণটিকে অপরাধী সাব্যস্ত করে ফেলেছেন।

জেবতিকের পোস্টটি এসেছিল গতকাল। পড়ে তখনই আমার মনে একটু দ্বিধার জন্ম হল। তার পোস্টের মূল সুর- শাহী মির্জা অপরাধী। হাস্যকরভাবে তিনি পোস্টে আশা প্রকাশ করেছেন, মির্জাকে শাস্তি দিয়ে রাষ্ট্র অনুকম্পা প্রদর্শন করুক।
আমি চোখ রেখে বারবার লক্ষ্য করছিলাম, কেউ না কেউ তার ভুলটুকু ধরিয়ে দেবেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা কেউ দেননি। সচলায়তনের এক কর্ণধার কাম গৌণ পোস্টারের (!) এক পোস্টের সূত্র ধরে তিনি আবার একটি পোস্ট দিয়েছেন আমারব্লগে। কী অদ্ভূত! সেখানে তিনি আরো উচ্চকন্ঠ। নিশ্চিত হয়ে দাবি করছেন, শাহী মির্জা অপরাধী।

শাহী মির্জাকে কি অপরাধী বলা যায়?
যার বিরুদ্ধে এখনো ভালোমতো অভিযোগই গঠন করা হয়নি, পুলিশী চূড়ান্ত রিপোর্ট তো দূরের কথা। তারপর আছে দীর্ঘ সাক্ষ্য-শুনানির ব্যাপার-স্যাপার। এ সব প্রক্রিয়া শেষে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন অভিযোগ প্রমাণ হওয়া না-হওয়ার বিষয়ে। তর্কের খাতিরে অভিযোগ প্রমাণ হলোই না হয়, তারপরেও আসামির আছে আপিল করার অধিকার। এই সবকিছু তিন মাসেও শেষ হতে পারে, তিন যুগেও হতে পারে।

শাহী মির্জা এখনো অপরাধী নয়, এমনকি আইনের চোখেও নয়। অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণের পর আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন, মির্জা অপরাধী নাকি নিরাপরাধ। তার আগ পর্যন্ত তাকে সন্দেহ করা যাবে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে, কিন্তু তাকে অপরাধী বলা যাবে না। প্রথম আলোর প্রতিবেদন যারা পড়েছেন, তারা লক্ষ্য করবেন, সেখানে শাহী মির্জা ও তার বন্ধুদের হ্যাকার হিসেবে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে 'হ্যাকিংয়ে জড়িত সন্দেহে'। সাংবাদিকতার নীতিমালায় বিচারের আগে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। আসলে কোনো নীতিমালাতেই যায় না।

বিচারের আগে অবিচার!
কারো বোঝার ভুলে হোক, আর সজ্ঞানে হোক, বিচারের আগেই অপরাধী সাব্যস্ত করে, কল্পিত শাস্তিশেষে আগবাড়িয়ে রাষ্ট্রের অনুকম্পা চেয়ে, সম্ভাবনাময় তরুণটির ওপর  যে অবিচার করা হচ্ছে- তা কি বুঝতে পারছেন কেউ?

প্রথম প্রকাশ  |  দ্বিতীয় প্রকাশ

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply