দুই রাজাকার : নুরু মিয়া উধাও, মুসা বিন শমশের আকস্মিক 'মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক'!

ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহবায়ক ডা. এম এ হাসান অসামান্য এক মানুষ। দিনের পর দিন অসীম ধৈর্য্য নিয়ে তিনি সংগ্রহ করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নানা তথ্য, উপাত্ত, প্রামাণ্য দলিল। কদিন আগে এই সবকিছু তিনি হস্তান্তর করেছেন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্তে গঠিত ট্রাইব্যুনালের কাছে। নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজাকার, আলবদর ও শান্তি কমিটির সদস্যদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকাটি গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে। এই তালিকার ওপর নির্ভরও করা যায়। তবে একটা কিন্তু আছে!

গোটা ফরিদপুর অঞ্চল খুঁজেও শেখ হাসিনার বেয়াই বর্তমান শ্রম ও জনশক্তিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পিতা নুরু মিয়া, যিনি একাত্তরে শান্তি কমিটির স্থানীয় চেয়ারম্যান ছিলেন, তার নাম ওই তালিকায় খুঁজে পেলাম না! ফরিদপুর জেলায় শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকায় দেখছি চারটি মাত্র নাম- ডা: কাজী ইমদাদুল হক, আজিরুদ্দীন খান, আনিস কাজী ও আদিল উদ্দীন হাওলাদার। তাহলে কি নুরু মিয়া ইতিমধ্যে মৃত বলে তার নাম যুক্ত করা হয়নি? সেটাই বা কিভাবে হয়! ঢাকার রায়েরবাজারের এক ঘৃণ্য রাজাকার হেদায়েত উল্লাহ, মৃত হলেও তার নাম তালিকায় এসেছে। অবশ্য এমন না যে, নুরু মিয়ার নাম না থাকায় তালিকাটি গুরুত্ব হারিয়েছে। সেটা হতেই পারে না। নুরু মিয়া না থাকলেও সেটা যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ওই তালিকায় নুরু মিয়ার থাকাটা জরুরি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই বর্তমান শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রীর পিতা হলেও তার একাত্তরের অপরাধ ম্লান হয়ে যায় না- এটা জানান দেওয়ার জন্যই জরুরি। হ্যাঁ, নিজামী-মুজাহিদ-কামারুজ্জামান কিংবা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে নুরু মিয়াকে মেলানো যায় না। ওই নরপশুদের যে অপরাধ, নুরু মিয়া সেই মাপের অপরাধীও হয়তো নয়। কিন্তু শান্তি কমিটির শীর্ষ সারির নেতা মানেই সে অপরাধী, দ্বিধাহীনভাবেই। মরণোত্তর বিচার হয়তো না হতে পারে তার, কিন্তু শান্তি কমিটির ঘৃণ্য সদস্যদের তালিকায় নুরু মিয়ার নাম গোটা গোটা অক্ষরে লেখা থাকতেই হবে। এর প্রতীকী গুরুত্ব আছে। শেখ হাসিনার বেয়াইয়ের পিতা হওয়ার সুবাদে শান্তি কমিটির এক ঘৃণ্য সদস্যের নাম কাটা গেছে বা যাবে- এমন ছোটলোকী, এমন অন্যায়, এমন জোচ্চুরি জীবনেও মেনে নেবো না। এই অপবাদ শেষ বিচারে আওয়ামী লীগের জন্যও ভালো হবে না।


ঘৃণ্য রাজাকার মুসা বিন শমশের তাহলে 'মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক'?
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায়, তখন দৈনিক জনকন্ঠে 'তুই রাজাকার' শীর্ষক এক ধারাবাহিক সিরিজে ফরিদপুরের কুখ্যাত রাজাকার মুসা বিন শমশেরের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে লোমহর্ষক কাহিনী ছাপা হলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জনকন্ঠের সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের ওপর নারকীয় হামলা চালায় মুসা বিন শমশেরের ভাড়াটে গুন্ডারা। পরে গুরুতর আহত ওই সাংবাদিকের পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। শুরু হয় তার পঙ্গুজীবন। আরো পরে শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিয়ে আলোচনায় আসে মুসা বিন শমশের। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির তালিকায় ফরিদপুর জেলার প্রধান ১৩ জন রাজাকারের মধ্যে তার নাম আছে শুরুর দিকেই। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর, আজ থেকে মাত্র দুদিন আগে মুসা বিন শমশের ওরফে নুলা মুসা নিজেকে রীতিমতো 'মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক' হিসেবে দাবি করে বসে আছে!

আমাদের সময়ের সংবাদটি দেখুন- 'ডেটকোর চেয়ারম্যান ড. মুসা বিন শমশের নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক দাবি করে বলেছেন, গতকাল দৈনিক আমাদের সময়-এ প্রকাশিত ‘আওয়ামী লীগে যুদ্ধাপরাধী খুঁজছে বিএনপি’ শীর্ষক সংবাদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। গতকাল পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে আমার বলিষ্ঠ ভূমিকা ও নেতৃত্ব ছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের একপর্যায়ে ২২ এপ্রিল পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হই। পাক-হানাদার বাহিনী আমাক দীর্ঘ ৮ মাস আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। ৯ ডিসেম্বর কয়েদখানা থেকে মুক্তি লাভ করে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। বর্তমান সরকারের যুদ্ধাপরাধী বিচারের কার্যক্রমকে নস্যাৎ করার জন্য কিছু স্বার্থান্বেষীমহল এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলে তিনি প্রতিবাদলিপিতে দাবি করেন।'

হায়!
---
ছবিতে বসা অবস্থায় (বাঁ থেকে) কানিজ ফাতেমা, ববি হাজ্জাই, শেখ জহরত মাহ্না, ব্যারিস্টার রাশমা ইমাম, মুসা বিন শমশের। দাঁড়ানো আছেন ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম, শেখ ফজলে ফাহিম, ন্যান্সি জাহরা, ব্যারিস্টার জুবি ইজ্জত, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম


প্রথম প্রকাশ

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply