না আন্দোলন, না সংস্কার——জলপাইরঙা এই জন্তুগুলোর বিরুদ্ধে দরকার একটা সুনামি



'পুলিশের ওপর হামলা' ও 'সরকারি কাজে বাধা দেওয়া'——বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা কৌতুককর দুটি প্রবাদ! রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কাউকে জব্দ করার জন্য এই দুটি অজুহাতের ব্যবহার হয়ে আসছে সম্ভবত বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই। আজও তার ব্যতিক্রম হল না। পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মানিক মিয়া এভিনিউতে বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক, পাপিয়া সরোয়ারসহ ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুনুর রশিদ, সহকারী কমিশনার বিপ্লব কুমার ও থানার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) মারধর করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তারও আগে ফারুকের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে ডিএমপির এক অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগে মামলা এবং পরে তদন্ত কমিটি গঠনের সূত্রটি আমাদের অনেকেরই জানা। স্পষ্টই বোঝা যায়, মহানগর পুলিশ কমিশনারের তদন্ত কমিটি কী আবিস্কার করবে! পুলিশের পোশাক পরা মহামান্য ছাত্রলীগ নেতা হারুনুর রশিদ, বিপ্লব কুমার আর পরম শ্রদ্ধেয় কনস্টেবলদের ওপর 'সংঘবদ্ধ হামলার' অভিযোগে উল্টো বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকেই দোষী সাব্যস্ত করা হবে——এটা আগামই বলে দেওয়া যায়।

পুলিশ পারে, কিন্তু কতোটা পারে?
ফারুক যদি গালাগাল কিংবা হামলা করেও থাকেন, তাহলেও রাষ্ট্রের নিম্নপদস্থ কর্মচারী হিসেবে পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার কিংবা কনস্টেবলদের বিন্দুমাত্র অধিকার নেই তার ওপর পাল্টা নারকীয় হামলা করার। তারা মামলা দিতে পারতো, সেই মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারতো। বাংলাদেশের ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্স অনুসারে চিফ হুইপের স্থান পঞ্চম। আর খোদ পুলিশের যিনি সর্বেসর্বা, সেই আইজিপির স্থান ১৬ নম্বরে। এই উপকমিশনার আর সহকারী কমিশনাররা গোণাতেই নেই। অনেকেরই যুক্তি, ফারুক লোকটি সুবিধার নয়। হ্যাঁ, আমি ধরলাম যে, লোকটি ডাকাতদলের সর্দার। কিন্তু তবুও কি পুলিশ এই বর্বরতা চালাতে পারে?

এক ছবি সব আমলেই
এর আগে বিএনপি শাসনামলেও আমরা দেখেছি, তারা পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর একইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম, তোফায়েল আহমেদ ছাড়াও দিলীপ বড়ুয়া, রাশেদ খান মেননদের ওপর বিএনপির পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া—এই সেদিনকার ঘটনা। তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির হরতালের দিনও সরকারের লেলিয়ে দেওয়া এই পুলিশ হামলে পড়েছিল নিরীহ মানুষের ওপর। নিজেই চোখেই দেখেছি, সে কী নির্মমতা! এই অসুস্থ সংস্কৃতি পরিবর্তনের সুযোগ ছিল আওয়ামী লীগের সামনে। তারা সুযোগটা নেয়নি। উল্টো তার অপব্যবহার করেছে মনের সব বিদ্বেষ একত্র করে। কিন্তু এই দিন তো দিন নয়। আওয়ামী লীগ তো নিশ্চয়ই নিশ্চিত নয় যে, তারাই ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে পরবর্তী মেয়াদে। আগামী নির্বাচনে বিএনপিও তো ক্ষমতায় যেতে পারে। তখন যদি এই পুলিশকেই লেলিয়ে দিয়ে সাহারা খাতুন কিংবা শামসুল হক টুকুদের লাঠির আগায় নাচায়? কিংবা আরো ওপরমহলকে চ্যাংদোলা করে যদি নিয়ে যায়?

বলতে দ্বিধা নেই
পুলিশের এই বর্বর হামলা যদি হতো আওয়ামী লীগের চিফ হুইপের ওপর, এমনকি সাহারা খাতুনের ওপরও——অবিকল একই বেদনা স্পর্শ করে যেতো আমাকে, একইরকম ক্ষোভে দগ্ধ হতাম আমরা। আমি কেবল ভাবছি, এইরকম এক পরিস্থিতিতে আমি নিজে কিংবা আমার মতোই কোনো সাধারণ মানুষ যদি পুলিশরূপী এই হায়েনাদের কবলে পড়তো, কী ঘটতো তাহলে? রক্তাক্ত বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তবু প্রাণ নিয়ে হাসপাতালে যেতে পেরেছেন, কোনো সাধারণ মানুষ কি নিজের প্রাণটা বাঁচাতে পারতো? প্রাণ বাঁচানো গেলেও থানায় নিয়ে কী বর্বর অত্যাচারটাই চালানো হতো! হয়তো ১০১ মামলার আসামিও।

দরকার একটি সুনামি
না, কোনো সংস্কার কর্মসূচি নয়——সে তো শুধুই সময়ের অপচয়। মানবাধিকার শেখানোর কোনো প্রশিক্ষণ কর্মশালা নয়——সে শুধুই আইওয়াশ। এমনকি কোনো আন্দোলনও নয়——সে হল সমস্যাকে আরো বেশি দিন জিইয়ে রাখার পদ্ধতি মাত্র। এই চির অমানুষ বর্বর পুলিশের বিরুদ্ধে দরকার একটি সুনামি—শুধুই একটি সুনামি

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply