ব্লগের দুই ভার্চুয়াল শত্রুর জন্য মন খারাপের মেঘ জমেছে

১. কিছু ছেলেমানুষি আছে আমার। মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিক- এই দুই শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রথম ধাপেই আমার মুল লক্ষ্য থাকে তাদের আর্থিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া। সরাসরি সেটা জিজ্ঞেস করা শোভন নয়। তাই নানান কায়দা-কৌশল করতে হয়, ভান-ভনিতাও। মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিক- এই দু ধরনের মানুষকে স্বচ্ছল দেখতে কেন যেন ভালো লাগে আমার। এক ধরনের সুখ পাই মনে। বলাবাহুল্য, এই সব ক্ষেত্রে হতাশই হতে হয় প্রায়। পিয়াল, আমাদের অমি রহমান পিয়ালের একটি লেখা পড়লাম। পড়ে, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, খারাপ লাগল। পিয়াল একসময় আমার সতীর্থ ছিলেন। ভণ্ডামি আছে তার মধ্যে, বিকৃতিও আছে। তবু রাগ লাগছে তার ওপর, মায়াও। সবকিছুর ওপরে জীবন বড়ো।

পিয়াল লিখছেন - "এই দিশেহারা ভাবটা আমার অনেকদিন থেকেই। এক বছরের উপর আমি পুরা বেকার। সাংবাদিকতা ছাড়া অন্য লাইনেও কিছু করার চেষ্টা কইরা আমি ব্যর্থ। এমনকি একজনের সুপারিশে ইউএইতে সিকিউরিটি গার্ডদের কোম্পানিতেও সিভি দিছি। আমার সংসার চলে কিছু বন্ধুবান্ধবের দয়া দক্ষিণায়। এবং ব্যাপারটা অনেকদিন ধইরা কন্টিনিউ করতেছে বইলা তারাও বিরক্ত। এদের টাকাতেই আমি বাড়ি ভাড়া দিই, নেট বিল দিই, বউর পড়াশোনার খরচ যোগাই, বাচ্চার দুধ কিনি আর একমাত্র সখের নেভি সিগারেট খাই। বাজারে আমার দেনা দুই লাখ ইতিমধ্যেই ছাড়াইছে। সো রিলিফ ফান্ড আস্তে আস্তে সংকুচিত হইতেছে নানা অজুহাতে। বন্ধুরা আমারে দেখলে মেসেঞ্জার থিকা লগ্আউট হয়, মেইলের জবাব দেয় না, ফোন কইরা বাসায় আসতে বললে আতঙ্কিত হয়। কারণ আমি দাওয়াত দিয়া তাদের খাওয়াই না। বরং তাদের পয়সায় চা সিগারেট খাইয়া যাওয়ার আগে কিছু টাকা রাইখা দেই। সংসারটা ভাঙ্গি ভাঙ্গি কইরাও টিকা আছে আমার সর্বশেষ প্রতিশ্রুতিতে- এই অক্টোবরেই একটা কিছু হবে। তুই না ১৫ তারিখ জয়েন করোস- আম্মার এই নতুন শুরু হওয়া অনুযোগে মনে হয় হুমায়ুনের উপনাস্যের চরিত্রের মতো সকালে বাসা থিকা বাইর হইয়া যাই, রমনা পার্ক বা কোথাও গিয়া বইসা থাকি। বিকালে ফিরা বলি অফিস কইরা আসলাম। কারণ আমারে সবাই গত একবছর বাসায় কম্পিউটারের সামনেই দেখতেছে। লেখালেখি করি। ধান্দাবাজির নতুন সংস্করণ হিসাবে লোকজনরে বলি মুক্তিযুদ্ধ নিয়া লেখালেখির জন্য একটা ফান্ডিং প্রজেক্ট থাকলে ভালো হইতো। খাওয়া পড়ার চিন্তা না থাকলে এই জিনিসটা নিয়া ফাটাইয়া দিতাম।"

২. অরূপ কামাল বাংলা ব্লগ সচলায়তনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সচলায়তনের ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিল বেশ অনেক আগে থেকেই। অমার্জিত আচরণের কারণে সচলায়তনের মডারেটর অরূপ ও হিমু দীর্ঘদিন ধরেই নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছিলেন। কিছু খবরাখবর আমরা পাচ্ছিলাম। তার জের ধরে অরূপ বিদায় শুধু নয়, তার পুরো ব্লগই সম্ভবত মুছে দিয়েছেন গতকাল। অরূপ লিখেছেন - "সচলায়তনের সাথে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই লম্বা সময় ধরে। ব্যবস্থাপনা, নীতিনির্ধারন, মডারেশন, অর্থায়নের সাথে নেই বলে সচলায়তনের কোন দায় আমি আর বহন করি না। স্বভাবতই আমার দায়ও সচলায়তনের ঘাড়ে চাপানো চলে না এই কারনে। এরপরও যেন কেউ বিব্রত না হন সে কথা মাথায় রেখে সচলে আমার দোকান বন্ধ করে দিলাম (ব্লগস্পটেও যে খুব লিখি তা নয়)।"

ছবিটা অরূপের তোলা

Tags:

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply