বাংলাদেশে একটি পেপারলেস অফিসের নিজস্ব স্বপ্ন

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের দক্ষিণ এশিয়া সংবাদদাতা ড্যানিয়েল পার্ল পাকিস্তানে ইসলামি জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছিলেন ২০০২ সালে। তার স্মরণে একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম আছে। আমি বছর দুয়েক আগে সেই ফেলোশিপের জন্য আবেদন করেছিলাম। ৮০ ভাগ নিজের অবহেলা এবং ২০ ভাগ ডিএইচএলের দায়িত্বহীনতায় আমার সেই আবেদন মার্কিন মুল্লুকে যখন পৌঁছল, তখন নির্ধারিত সময়সীমা শেষ। তারা দুঃখ প্রকাশ করে একটি মেইল দিয়েছিলেন আমাকে। আমার ইচ্ছে ছিল, ফেলোশিপের অধীনে আমেরিকান নিউজরুম থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা। সেটা হয়নি। তবে নিজের মতো করে যা কিছু মনে আসছে, তা নিয়ে এই লেখা-

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইট নিঃসন্দেহে নান্দনিক নয়, তথ্যবহুলও নয়। কেউ যদি বলেন, সরকারি জিনিস এমনই হয়! তাহলে তারা হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগারের ওয়েবসাইটটি একবার দেখুন- যেমন নান্দনিক, তেমনি তথ্যবহুল। তবে যে দেশ একদা তথ্য চুরি হয়ে আশঙ্কায় বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হতে অসম্মতি জানিয়েছিল, সেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে সবিস্ময়ে দেখা গেল এর লাইব্রেরি সেকশনে রয়েছে ভার্চুয়াল সার্ভিসেস। ইলেকট্রনিক-বই (ই-বুক) পড়ার জন্য সেখানে রয়েছে বেশকিছু লিংক। রয়েছে এনসাইক্লোপিডিয়া-উইকিপিডিয়ার খোঁজখবরও। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ওয়েবসাইট থেকে হিটলারের মাইন ক্যাম্ফ ডাউনলোড করা যাচ্ছে- বিস্ময় নিয়ে আমি লক্ষ্য করি। বিদঘুটে রক্ষণশীলতা তাহলে ভাঙছে বাংলাদেশে!
মাইন ক্যাম্ফই বা কেন, আপনি যদি বই পড়তে চান, তাহলে অনলাইনেই এখন হাজার হাজার বই পড়তে পাওয়া যায়। পিডিএফ ফরম্যাটে কয়েক মিলিয়ন বই ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ছেড়েছে ওয়ার্ল্ড ই-বুক ফেয়ার- এটা পুরনো খবর। আপনি যদি গান শুনতে চান, তাহলে সহস্রাধিক ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন নিমেষেই। সাড়াজাগানো ছবি স্মামডগ মিলিওনেয়ার মুক্তি পেল সেদিন, আপনি সেটাও ডাউনলোড করে দেখতে পারবেন পয়সা ছাড়াই। আপনি যদি হন গবেষক কিংবা ছাত্র নয়তো সাংবাদিক- আপনার ভাবনার সবই পাবেন ইন্টারনেটে। অথচ দেখা যায়, প্রযুক্তির কাছাকাছি থেকেও অনেকে পাহাড়সমান অজ্ঞতা আর অমূলক নানা ধারণা নিয়ে শ্রেফ বসে থাকেন।

প্রযুক্তির এখন কতোই না সুবিধা! আর তার অনেকটা আমাদের নাগালেই। ঢাকা শহরের কথাই ধরুন। কোথায় সাইবার ক্যাফে নেই, বলতে পারেন? পুরান ঢাকার যে গলি সিটি কর্পোরেশনের অবহেলার ছাপ বহন করছে, সেখানেও তো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে সাইবার ক্যাফে। এমনকি দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি , খাগড়াছড়ির কথাই ধরুন। বিটিসিএলগ্রামীণ ফোন কিংবা সিটিসেলের ইন্টারনেট সুবিধা কি যায়নি সেখানে?
সংবাদপত্রের কথাই ধরা যাক। পঞ্চগড়ে কোনো ঘটনা ঘটল। আধঘন্টার মধ্যেই ঢাকায় বসে সে বিষয়ের লিখিত রিপোর্ট কি পাচ্ছি না ইমেইলে? প্রধান দৈনিকগুলো এখন তো দেশের সব অঞ্চল থেকে প্রায় সব খবরই ইমেইলে পেয়ে আসছে।
প্রযুক্তিগত সুবিধা আছে বলে কক্সবাজার কিংবা সিলেটের চা বাগানে অবকাশ যাপনে গিয়েও একটি প্রকাশনা- হোক তা পত্রিকার পাতা কিংবা আস্ত বই- অনায়াসে বের করা এখন সম্ভব। আজ প্রস্তুতি নিয়ে এমনকি তা আগামীকালই!

আমার চোখে ভাসছে, আরো একটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটল গাজীপুরে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে রিপোর্টাররা ইমেইল খুলে সেখানেই খবর নোট করে নিচ্ছেন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে (ঢাকার কয়েক হাজার ব্যবসায়ী কিন্তু পামটপ বা পিডিএর মতো ডিভাইস ব্যবহার করছেন হরদম)। নোটগুলো সাজানো শেষে অল্প পরেই খবরটি অফিসের ইমেইলে চলে গেল। পাে তাকিয়ে দেখি, আলোকচিত্রীরা ল্যাপটপমোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি ঘটনাস্থল থেকে মুহূর্তেই অফিসে পাঠিয়ে দিচ্ছেন (সম্ভবত যায়যায়দিন প্রথম এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল ঢাকায়)। ইয়াহু কিংবা এমএসএন ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে ঢাকার সাংবাদিক কলকাতা কি কুষ্টিয়ায় আত্মগোপনে থাকা জাঁদরেল নেতার এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ করছেন কিংবা সোর্সের কাছ থেকে সর্বশেষ খবরাখবর জেনে নিচ্ছেন।
অনেকেরই কাছেই এটা অতিকল্পনা মনে হতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা, মাত্র একটি প্রজন্ম পার হলেই এরকম দৃশ্য বাংলাদেশে পরিচিত হয়ে উঠবে। 

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply