স্বাক্ষর সংগ্রহ করে বুকলেট ছেপে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যাবে?

ভার্চুয়াল দুনিয়ায় মুখে মুখে অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু মাঠে নামার আগে সবদিক ভাবা উচিত, যেন ছোট ছোট উদ্যোগগুলো মাঠে মারা না পড়ে। প্রথমেই দুটি প্রশ্ন। উত্তরও নিজেই দিলাম।

প্রশ্ন : জামাল ভাস্কর নতুন কী করছেন? এর ফলাফল কী?
উত্তর : পোস্ট পড়ে জানা যাচ্ছে, তাদের মূল লক্ষ্য স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। বাংলাদেশের বাস্তবতা মনে রাখলে এই ধরনের অতি ভদ্রোচিত কাজে খুব একটা উৎসাহ খুঁজে পাই না। তারপরও কথা হল, এই উদ্যোগে জনমত তৈরির জন্য নতুন কী করা হচ্ছে? এই কাজ তো আগেও হয়েছে- আরো ব্যাপকাকারে, আরো বড়ো পরিসরে। ভাস্করের পোস্ট পড়ে আমি ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির একজনকে ফোন করেছিলাম কিছুক্ষণ আগে, কিছু তথ্য জানতে। তিনি জানালেন, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির উদ্যোগে গত জুন মাস নাগাদ সারা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। অংকটা সঠিক। কারণ সে সময় আমি নিজেও সেই স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে যুক্ত ছিলাম। ওই নেতা জানান, পরে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মাধ্যমে সবগুলো স্বাক্ষর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। একটি করে কপি জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছিল।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজটি আগে আরো ব্যাপকাকারে হয়েছিল এবং প্রভাবশালী একটি সংগঠনের মাধ্যমে ওই স্বাক্ষরপত্র জাতিসংঘেও গিয়েছিল। কিন্তু এর কোনো ফল, কোনো প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি।
এছাড়া শেখ হাসিনার ভাষণ এবং ১৯৭৩ সালের সংশ্লিষ্ট ভাষণ নিয়ে বুকলেট তৈরি করা হলে তা জনমনে আদৌ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে কিনা, তা ভাবতে হবে। আপনারা অনেকেই জানেন, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির বেশ অনেকগুলো মানসম্মত প্রকাশনা আছে।

প্রশ্ন : ব্লগারদের ক্ষুদ্র কমিউনিটির পক্ষে সর্বোচ্চ কয়টি স্বাক্ষর সংগ্রহ করা সম্ভব?
উত্তর : ধরা যাক ২০০ জন ব্লগার এবং তাদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে আরো ১০০ জন স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে সার্বক্ষণিক যুক্ত হলেন। এই ৩০০ জনের প্রত্যেকেই ৫০০ করে স্বাক্ষর সংগ্রহ করলেন। তাহলে মোট স্বাক্ষর দাঁড়াল ১ লাখ ৫০ হাজার। কিন্তু এই স্বাক্ষরগুলো ফাইলে ভরে আমরা করবোটা কী? আমার অভিজ্ঞতায় এই ধরনের স্বাক্ষরপত্র সংসদ ভবনের কোনো একটি কক্ষের ফাইলের স্তূপে চাপা পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। এভাবে আসলে সরকারকে প্রভাবিত করা যায় না। স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সরকারকে প্রভাবিত করার কাজটি বিদেশে হয়, কিন্তু বাংলাদেশে সেরকম উদাহরণ এ পর্যন্ত দেখিনি। দৈবক্রমে এই কাগজ যদি শেখ হাসিনার সামনে যায়ও, স্বাক্ষর-টাক্ষরে প্রভাবিত হওয়ার মানুষ তো তিনি নন। আবার মাত্র একটি স্বাক্ষরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত হতে পারে, যদি শেখ হাসিনা তার কলমটি হাতে তুলে নেন।

এখন সেই কাজটিকেই বেগবান করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরুর জন্য আওয়ামী লীগকেই ক্রমাগত চাপে রাখতে হবে। তার জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান কিংবা বুকলেট তৈরি কার্যকর কিছু নয়। স্বাক্ষরে যদি কাজ হতো, তাহলে নির্মুল কমিটির উদ্যোগের পর বাংলাদেশের ওপর সিডর বয়ে যেতো। তা যেহেতু হয়নি, ভাবতে হবে অন্য কিছু। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঢাকার অলিগলি পোস্টারে ছেয়ে ফেলার হট্টগোলীয় প্রস্তাবটি বরং অধিক কার্যকর মনে হয়েছে। 

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply