টেলিটক বিপর্যয় অথবা মোবাইল বেনিয়ার কাছে যেভাবে ফিরতে হয় শেষমেশ

টেলিটক সিমের প্যাকেটের গায়ে নাম্বার দেখে সকালেই আমি ১২৩৪-এ ফোন করি। ধরেন এক মহিলা। আমি সরাসরি টেলিটক ইন্টারনেটের কনফিগারেশন জানতে চাই। উত্তরে তিনি আচমকা আমার অবস্থান জানতে চান। ভাবি, টাওয়ার-ফাওয়ারের ব্যাপার হতে পারে হয়তো। আমি জানাই সবিস্তারে। মহিলা বলেন, আপনি কাইন্ডলি আমাদের বনানী অফিসে যান। অবাক হই, দু লাইনের কনফিগারেশনের জন্য অফিসে যেতে হবে? বলি, আপনি বরং বনানীর ফোন নাম্বারটা দিন। তিনি নাম্বার দিলেন। সেই নাম্বারে ফোন করতে গিয়ে শুনি, 'এই নাম্বারটি বর্তমানে খালি আছে।' উপায় না দেখে ঢুঁ মারি টেলিটকের ওয়েবসাইটে। পোড়া কপাল, সেটা ডাউন! এর আগের দিনও একই অবস্থা দেখেছিলাম। অতঃপর গুগলের ক্যাশ থেকে হেল্পলাইনের নাম্বার জোগাড় করি। সকালে কী দেখে বেরিয়েছিলাম, মনে পড়ছে না, দুটো নাম্বারই বন্ধ পেলাম। শনিবার যেহেতু, ভাবলাম হেল্পলাইনও নিশ্চয়ই ছুটিতে।

বনানী কাস্টমার সেন্টারে দু দণ্ড আলাপ
অনেক খুঁজেটুজে বনানী কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের একটা নাম্বারে ফোন করি। কেউ একজন ধরল, কন্ঠ শুনে মনে হল অল্পবয়সী। নিম্নলিখিত কথাবার্তা হল তার সঙ্গে।
- আমার পিসিতে ইন্টারনেট কানেকশন কিভাবে সেটআপ করবো, একটু বলবেন?
- উমমম...... আপনি পিসিস্যুট ইনস্টল করেন। কানেকশন পেয়ে যাবেন।
- পিসিস্যুট কোথায় পাওয়া যাবে?
- ইন্টারনেটে গুগল থেকে পাবেন।
- কনফিগারেশনটা কি ফোনে বলা যাবে?
- এগুলো আমাদের কাছে প্রিন্ট করা থাকে। আপনি আমাদের অফিসে আসলে পাবেন। ফোনে তো এতোকিছু বলা সম্ভব নয়, তাই না?
- ঠিক।

বিকেলে আবার কাস্টমার কেয়ারের ফোন
বিকেলে একটা নম্বর থেকে কল আসে-
- ভাই আপনি মিসকল দিয়েছিলেন?
- না তো! এটা কি টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার?
- হ্যাঁ।
- মিসকল তো না। কলই করেছিলাম। আপনি কি একটু হেল্প করতে পারেন ইন্টারনেট সেটআপ নিয়ে?
- বলুন কী সমস্যা?
- টাকা রিচার্জ করেছি। রেজিস্ট্রেশনও করেছি। রিপ্লাইও এসেছে। কিন্তু ইন্টারনেট তো অ্যাকটিভ হয় না।
- আপনি কী সেট ব্যবহার করেন?
- নকিয়া (মডেল নাম্বার বললাম)
- সমস্যা হল, এই মডেলের ফোনে টেলিটকের ইন্টারনেট ব্যবহার করলে ভাইরাস চলে আসে।
- আমি এর আগে এই সেটে গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট ইউজ করেছি। সমস্যা তো হয়নি।
- এটা আমাদের টেলিটকে হয়। এইজন্য আমরা মানা করি। আপনি একটা কাজ করতে পারেন। ওয়ারিদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
- সেটা কি ভালো হবে?
- হ্যাঁ, ভালো হবে। আচ্ছা, আপনি সাপোর্টের আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
- জ্বি ভাই, দেন। (এ পর্যায়ে আরেকজন এলেন)
- টেলিটকের স্পিড আসলে একটু কম। তবে সামনে আমাদের কিছু ভালো প্যাকেজ আসছে।
- আমি আনলিমিটেড ইউজ করতে চাই। কী করা যায়, বলেন তো ভাই?
- আনলিমিটেড চাইলে আপনি গ্রামীণের ৩৪৫ টাকার একটা প্যাকেজ আছে, ওইটা ব্যবহার করেন।
- হুমমম...... সেটাই হয়তো ব্যবহার করতে হবে। তবে ভাই একটা কথা বলি, টেলিটক কেন দাঁড়াচ্ছে না, ভবিষ্যতেও কেন দাঁড়াবে না এটা আজকে আমার জানা হয়ে গেছে।

কথা আর বাড়ালাম না। কারণ বুঝতে পারছিলাম, মন খারাপের মেঘ জমছে। ইন্টারনেটের জন্য নয়, দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে আত্মহননের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, কিভাবে অবলীলায় আত্মহত্যা করতে পারে- নিজের চোখে সেটা দেখেই মনটা খারাপ ছিল অনেকক্ষণ।

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): টেলিটকমোবাইল ইন্টারনেটজিপিআরএসteletalk bangladeshmobile internetgprs ;

প্রথম প্রকাশ

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply