উপক্রমণিকা
এমন না যে, বঙ্গদেশীয় মোবাইল কম্পানিগুলোর কাস্টমার কেয়ার সেন্টার (বা কলসেন্টার) এম্রিকা বা ইয়োরোপে। এমনও না যে, নরওয়ের কলসেন্টার থেকে জনৈক রবার্ট ক্লিপ কুষ্টিয়ার আবদুস সামাদকে মোবাইল সেবা দিচ্ছেন। খুব সম্ভব হয়তো ধোলাইখালের পাশে, হয়তো মহাখালীর দিকে দুটি রুম ভাড়া নিয়ে, হয়তো নিজেদের অফিসের হলঘরেই সেই কাস্টমার কেয়ার সেন্টার বসানো হয়েছে।
কাস্টমার কেয়ার অথবা মংলা সমুদ্রবন্দর
হয়তো ১০, বাড়িয়ে ধরলে ৫০ হাজার ইংরেজিভাষী পাবলিক মোবাইল ব্যবহার করছে 'এই ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে'। তার বিপরীতে কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে, যারা বাংলাভাষী। চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়, এ দেশে মোবাইল গ্রাহকদের ৯৯ ভাগেরই মাতৃভাষা বাংলা। তারা ঘরে-বাইরে ২৪ ঘন্টা বাংলায় কথা বলে। কিন্তু ওরেব্বাপ, ভাবটা কী কাস্টমার কেয়ারের! দেখবেন, কী কাস্টমার কেয়ার, কী কলসেন্টার- সবগুলোই যেন একেকটি মংলা সমুদ্রবন্দর, যেখানে আংরেজির একেকটা জাহাজ এসে নোঙর ফেলেছে। যেন গ্রাহক আসিবামাত্রই নব্য সাহেব-সাহেবানরা আংরেজি খালাস করার জন্য প্রস্তুত। কর্পোরেট বণিকেরা বাণিজ্যের স্বার্থে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে মুটে মজুরকে তুলে আনবে, কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলার সময় আংরেজি মারাবে। নইলে যেন কর্তাদের মূত্রত্যাগে সমস্যার সৃষ্টি হবে, নইলে যেন মলত্যাগে বিঘ্ন ঘটবে সিইওদের।
শ্লার্পো!
হেল্পের হটলাইন পদ্ধতি
১২৩, ১১১ ছাড়াও আরো কী কী সব গ্রাহকসেবার হটলাইন আছে মোবাইল কম্পনিগুলোর, সেগুলোতে ফোন করলে আরেক বিপর্যয় এসে উপস্থিত হয়। দুই কোটি বাংলাভাষী মোবাইল গ্রাহকের জন্য যেসব কলসেন্টার, তারা সুন্দর বাংলা দিয়ে কথাবার্তা শুরু করতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, তারাও আংরেজি দিয়ে কথাবার্তা শুরু করবে। ভাষার কথা না হয় বাদই দিলেন, পকেট কাটার বিষয়টা তো আর ভোলা যায় না। হটলাইন সেবার নামে মোবাইল থেকে তরে তরে টাকা কেটে রাখার সব ব্যবস্থাই ফিট করে রেখেছে মোবাইল কম্পানিগুলো। আরে ভাই, তুমি কী প্যাকেজ দিবা না দিবা, টকটাইম খরচ করে আমি কেন সেটা শুনবো? আবার না শুনেও উপায় নেই। ১, ২, ৪, ৬- যা-ই চাপুন না কেন, বয়স্ক এক যান্ত্রিক নারীকন্ঠ কিছু না কিছু শুনিয়ে দেবে, যা প্রকারান্তরে ওই মোবাইল কম্পানির বিজ্ঞাপন।
'আ বিগ জিরো'
দেখা যায়, হটলাইন পদ্ধতিতে হেল্প পেতে হলে বাংলা-ইংরাজি-ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অপশন বেছে নিতে বলবে। ইতিপূর্বে অনেকে অবগত আছেন যে, এইসব ক্ষেত্রে ওই কন্ঠধারিণীর ওপরই চেপে বসার ইচ্ছা বহু কষ্টে দমন করেছি। তবে কন্ঠধারিণীর ওপর কেউ চাপতে চাইলে, তা গ্রাহকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে। এই জন্য অত্র লেখক দায়ী নয়। যা হোক, এই পর্যায়ে আপনাকে সম্ভবত ১ চাপতে হবে। তারপরের ফয়সালা হল- আপনি কি পোস্টপেইড নাকি প্রিপেইড। আমার নিজের ধারণা, পোস্টপেইড হল স্ত্রী আর প্রিপেইড হল বারবণিতা। কী একটা 'কি' চেপে সেই পাঠ শেষ করলে ঘোষিকা এবার ১০টি অপশন পড়ে শোনাবে। আবার 'কি' চাপলে আবার অপশন। আবার 'কি', আবার অপশন। অসীম ধৈর্য ধরে প্রক্রিয়াটা শেষ করার পর ফলাফল ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই 'আ বিগ জিরো'।
কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজারের সাহায্য পাওয়াও ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। প্রায়ই একটা স্বয়ংক্রিয় কণ্ঠ ভেসে আসবে। কন্ঠের মূল বাণী এইরকম- "দুঃখিত আমাদের (ক্ষুদ্র) কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সকল স্টাফ (কয়জন হবে রে?) এই মুহূর্তে ব্যস্ত (বা ছুটিতে বা ছাঁটাইয়ে) আছে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে তেত্রিশ মিনিট ৫০ সেকেন্ড।" এই ধরনের প্রতারণার ঘটনায় একবার 'খোদা হাফেজ' উচ্চারণ করে মোবাইলটা রিস্টার্ট দিয়ে অন্য কাজে মন দেওয়াই উত্তম।
জাতীয় থাপ্পড় সপ্তাহের অপেক্ষায়
মোটের ওপর মূল কথা হল এই যে, আংরেজির জাহাজ এইসব নব্য সাহেবদের ধরে এলোপাতাড়ি চটকানো জাতীয় কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমার ইচ্ছা আছে, এমনকি যদি কোনোদিন "জাতীয় থাপ্পড় সপ্তাহ" পালিত হয়, তাহলে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নাম লেখাবো অবশ্যই। তারপর মোবাইল কম্পানির সার্ভিস সেন্টার ঘুরে দিবসটিকে সাফল্যমণ্ডিত করার নিয়ত আছে। "জাতীয় রুই মাছ সপ্তাহ" যেখানে এসে গেছে, থাপ্পড় সপ্তাহ আসার দেরি মনে হয় নেই।
উপসংহার
আসলে এসবও এক ধরনের অপমান, মোবাইল কম্পানিগুলো যা সচেতনভাবেই এই দেশের মানুষের সঙ্গে করে থাকে। যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক কোটির ওপরে, তারা বলুক যে ইংরেজিভাষী কয়টা লোককে তারা সার্ভিস দেয় আর বাংলাভাষী কয় কোটি লোক তাদের গ্রাহক। একটেল-বাংলালিংক-ওয়ারিদের কয়টা গ্রাহক আছে, যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি?
ভাব মারানো আর কাহাকে বলে!
এমন না যে, বঙ্গদেশীয় মোবাইল কম্পানিগুলোর কাস্টমার কেয়ার সেন্টার (বা কলসেন্টার) এম্রিকা বা ইয়োরোপে। এমনও না যে, নরওয়ের কলসেন্টার থেকে জনৈক রবার্ট ক্লিপ কুষ্টিয়ার আবদুস সামাদকে মোবাইল সেবা দিচ্ছেন। খুব সম্ভব হয়তো ধোলাইখালের পাশে, হয়তো মহাখালীর দিকে দুটি রুম ভাড়া নিয়ে, হয়তো নিজেদের অফিসের হলঘরেই সেই কাস্টমার কেয়ার সেন্টার বসানো হয়েছে।
কাস্টমার কেয়ার অথবা মংলা সমুদ্রবন্দর
হয়তো ১০, বাড়িয়ে ধরলে ৫০ হাজার ইংরেজিভাষী পাবলিক মোবাইল ব্যবহার করছে 'এই ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে'। তার বিপরীতে কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে, যারা বাংলাভাষী। চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়, এ দেশে মোবাইল গ্রাহকদের ৯৯ ভাগেরই মাতৃভাষা বাংলা। তারা ঘরে-বাইরে ২৪ ঘন্টা বাংলায় কথা বলে। কিন্তু ওরেব্বাপ, ভাবটা কী কাস্টমার কেয়ারের! দেখবেন, কী কাস্টমার কেয়ার, কী কলসেন্টার- সবগুলোই যেন একেকটি মংলা সমুদ্রবন্দর, যেখানে আংরেজির একেকটা জাহাজ এসে নোঙর ফেলেছে। যেন গ্রাহক আসিবামাত্রই নব্য সাহেব-সাহেবানরা আংরেজি খালাস করার জন্য প্রস্তুত। কর্পোরেট বণিকেরা বাণিজ্যের স্বার্থে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে মুটে মজুরকে তুলে আনবে, কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলার সময় আংরেজি মারাবে। নইলে যেন কর্তাদের মূত্রত্যাগে সমস্যার সৃষ্টি হবে, নইলে যেন মলত্যাগে বিঘ্ন ঘটবে সিইওদের।
শ্লার্পো!
হেল্পের হটলাইন পদ্ধতি
১২৩, ১১১ ছাড়াও আরো কী কী সব গ্রাহকসেবার হটলাইন আছে মোবাইল কম্পনিগুলোর, সেগুলোতে ফোন করলে আরেক বিপর্যয় এসে উপস্থিত হয়। দুই কোটি বাংলাভাষী মোবাইল গ্রাহকের জন্য যেসব কলসেন্টার, তারা সুন্দর বাংলা দিয়ে কথাবার্তা শুরু করতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, তারাও আংরেজি দিয়ে কথাবার্তা শুরু করবে। ভাষার কথা না হয় বাদই দিলেন, পকেট কাটার বিষয়টা তো আর ভোলা যায় না। হটলাইন সেবার নামে মোবাইল থেকে তরে তরে টাকা কেটে রাখার সব ব্যবস্থাই ফিট করে রেখেছে মোবাইল কম্পানিগুলো। আরে ভাই, তুমি কী প্যাকেজ দিবা না দিবা, টকটাইম খরচ করে আমি কেন সেটা শুনবো? আবার না শুনেও উপায় নেই। ১, ২, ৪, ৬- যা-ই চাপুন না কেন, বয়স্ক এক যান্ত্রিক নারীকন্ঠ কিছু না কিছু শুনিয়ে দেবে, যা প্রকারান্তরে ওই মোবাইল কম্পানির বিজ্ঞাপন।
'আ বিগ জিরো'
দেখা যায়, হটলাইন পদ্ধতিতে হেল্প পেতে হলে বাংলা-ইংরাজি-ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অপশন বেছে নিতে বলবে। ইতিপূর্বে অনেকে অবগত আছেন যে, এইসব ক্ষেত্রে ওই কন্ঠধারিণীর ওপরই চেপে বসার ইচ্ছা বহু কষ্টে দমন করেছি। তবে কন্ঠধারিণীর ওপর কেউ চাপতে চাইলে, তা গ্রাহকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে। এই জন্য অত্র লেখক দায়ী নয়। যা হোক, এই পর্যায়ে আপনাকে সম্ভবত ১ চাপতে হবে। তারপরের ফয়সালা হল- আপনি কি পোস্টপেইড নাকি প্রিপেইড। আমার নিজের ধারণা, পোস্টপেইড হল স্ত্রী আর প্রিপেইড হল বারবণিতা। কী একটা 'কি' চেপে সেই পাঠ শেষ করলে ঘোষিকা এবার ১০টি অপশন পড়ে শোনাবে। আবার 'কি' চাপলে আবার অপশন। আবার 'কি', আবার অপশন। অসীম ধৈর্য ধরে প্রক্রিয়াটা শেষ করার পর ফলাফল ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই 'আ বিগ জিরো'।
কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজারের সাহায্য পাওয়াও ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। প্রায়ই একটা স্বয়ংক্রিয় কণ্ঠ ভেসে আসবে। কন্ঠের মূল বাণী এইরকম- "দুঃখিত আমাদের (ক্ষুদ্র) কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সকল স্টাফ (কয়জন হবে রে?) এই মুহূর্তে ব্যস্ত (বা ছুটিতে বা ছাঁটাইয়ে) আছে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে তেত্রিশ মিনিট ৫০ সেকেন্ড।" এই ধরনের প্রতারণার ঘটনায় একবার 'খোদা হাফেজ' উচ্চারণ করে মোবাইলটা রিস্টার্ট দিয়ে অন্য কাজে মন দেওয়াই উত্তম।
জাতীয় থাপ্পড় সপ্তাহের অপেক্ষায়
মোটের ওপর মূল কথা হল এই যে, আংরেজির জাহাজ এইসব নব্য সাহেবদের ধরে এলোপাতাড়ি চটকানো জাতীয় কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমার ইচ্ছা আছে, এমনকি যদি কোনোদিন "জাতীয় থাপ্পড় সপ্তাহ" পালিত হয়, তাহলে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নাম লেখাবো অবশ্যই। তারপর মোবাইল কম্পানির সার্ভিস সেন্টার ঘুরে দিবসটিকে সাফল্যমণ্ডিত করার নিয়ত আছে। "জাতীয় রুই মাছ সপ্তাহ" যেখানে এসে গেছে, থাপ্পড় সপ্তাহ আসার দেরি মনে হয় নেই।
উপসংহার
আসলে এসবও এক ধরনের অপমান, মোবাইল কম্পানিগুলো যা সচেতনভাবেই এই দেশের মানুষের সঙ্গে করে থাকে। যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক কোটির ওপরে, তারা বলুক যে ইংরেজিভাষী কয়টা লোককে তারা সার্ভিস দেয় আর বাংলাভাষী কয় কোটি লোক তাদের গ্রাহক। একটেল-বাংলালিংক-ওয়ারিদের কয়টা গ্রাহক আছে, যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি?
ভাব মারানো আর কাহাকে বলে!
0 মন্তব্য