কামারকে দিয়ে অলংকার বানাতে চাইলে যা হয়
বাংলাব্লগের ধরনটিই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে কোনো ব্লগেই সিরিয়াস আলোচনা জমবে না। কিন্তু প্রথম আলো ব্লগে পাঠকের কাছে যা চাওয়া হচ্ছে, তার সারমর্ম এরকম- প্রথম পাতায় দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত, একটি নজরুলগীতি, চারটি কবিতা, তিনটি ফটো ব্লগ আর কথাসাহিত্যের গতিপ্রকৃতি নিয়ে একটি সারগর্ভ প্রবন্ধ। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মাহবুব মোর্শেদ অবতীর্ণ হয়েছেন চৌকিদারের ভূমিকায়- লাঠি হাতে তেড়ে যাচ্ছেন এই পোস্ট থেকে ওই পোস্টে। দিনের পর দিন এই অসংলগ্ন আচরণ দেখে সবকিছু কেন যেন উন্মাদীয় মনে হচ্ছে। তার কারণও কিছু আছে। যেমন-
দিনের পর দিন মাহবুব মোর্শেদ নিজেই তার একটি করে পোস্ট স্টিকি করছেন- এটা দেখতে বেশ অশ্লীল দেখাচ্ছিল অনেকদিন ধরেই। এর প্রতিক্রিয়ায় তার সাদাকালো ছবিটাও ইদানিং অশালীন লাগছে। তবে সামহোয়্যারে নিজের ব্লগে মন্তব্য খরা পুষিয়ে নিতে যদি তিনি এই ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন, তাহলে ভিন্ন কথা।
ইউজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ কেন?
অ্যালেক্সার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রথম আলো ব্লগে হিট একেবারে কম হয়নি। লোকজন এসেছে প্রচুর। প্রথম আলোর মূল কাগজে বিজ্ঞাপন আসাতেও নতুন অনেক ইউজার ঢুঁ মেরেছে ব্লগে। কিন্তু আমার ধারণা, ৮০ ভাগ ইউজারই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে বা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কারণ ইউজাররা নিয়ন্ত্রণ কখনোই পছন্দ করে না। যেমন প্রতি সপ্তাহের রসআলোতে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, তা পাঠককে আকর্ষণও করছে। কিন্তু সেই একই কাজটি প্রথম আলো ব্লগে কেন করা যাবে না? পাঠক-লেখক এই জায়গায় এসে ধাক্কা খাচ্ছে। এরকম হচ্ছে প্রায় সব ক্ষেত্রেই। প্রতিদিন নানাভাবে ৩০ লাখ পাঠকের স্পর্শ পায় যে প্রথম আলো, তার ব্লগে এসে লম্বা চুলো চৌকিদার দেখে পাঠক-লেখক হোঁচট খাচ্ছে- এ খুব সুখকর সংবাদ নয়।
নতুন বোতলে সামহোয়্যারের গ্রুপ ব্লগ?
পাঠককে যে এই ব্লগ আকর্ষণ করছে না, তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ পোস্টে মন্তব্যের খরা। প্রথম আলো ব্লগের দুই-তৃতীয়াংশই (তারও বেশি হতে পারে) সামহোয়্যারের ব্লগার। তারা তো মন্তব্য-বিমুখ নন। তাহলে কেন মন্তব্য আসছে না? এমনিতে সামহোয়্যারের সূচনাপর্বের উদাহরণ প্রথম আলো ব্লগে খাটে না। সামহোয়্যার যখন শুরু হয়েছিল, তখন চারপাশে কেউ ছিল না। কোনো উদাহরণ ছাড়াই বাংলাব্লগ তাদের একটু একটু করে নির্মাণ করতে হয়েছিল। প্রথম আলো ব্লগের সৌভাগ্য যে, বাংলাব্লগের স্বর্ণযুগে তাদের পদার্পণ ঘটেছে। আর দুর্ভাগ্য এই যে, সেই সুযোগটাকে ব্লগ সংশ্লিষ্টরা কাজে লাগাতে পারছে না। এটার চেহারাটা দাঁড়িয়েছে অনেকটা সামহোয়্যারের গ্রুপ ব্লগের মতো। নির্দিষ্ট করে বললে "পজেটিভ বাংলাদেশ" গ্রুপের মতো- পোস্ট আছে, কবিতা আছে, গল্প আছে, মাহবুব মোর্শেদ আছেন, সুমন রহমান আছেন, কিন্তু মন্তব্য নেই। এর সরল অর্থ পাঠক স্বস্তি বোধ করছে না, তারা হতাশ হচ্ছে। বেশিরভাগই লগইনটা করে সামহোয়্যারে গিয়ে বসে থাকছে।
দলিললেখকের নীতিমালা
ব্লগারদের দমন করতে যারা চার-পাঁচ পৃষ্ঠার নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন, তারা কি ভূমি অধিদপ্তরের নেজারত শাখায় দলিললেখক হিসেবে চাকরি করেছিলেন আগে? জমির দলিল তৈরি করতেও তো এখন এতো শর্তাবলী লাগে না। গালি কিংবা অশ্লীল কিছু পোস্ট করা যাবে না এবং স্পর্শকাতর কোনো বিষয় দেওয়া যাবে না- এই তিনটি বিষয় দেখলেই ব্লগে আর কোনো নীতিমালা লাগে না। এমনিতে খোলা ময়দানে অশ্রাব্য গালির ব্যবহার আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না। এক্ষেত্রে মাহবুব মোর্শেদের অবস্থান আমার কাছে ভালোই লেগেছে। আর আছে দাঁড়িপ্রীতি। এই দাঁড়িপ্রীতি প্যাঁচালী ব্লগকে প্রায় ডুবিয়েছে, ঠিক একই কারণে প্রথম আলো ব্লগেরও ডোবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অথচ শুধুমাত্র প্রথম আলো ব্রান্ডটি থাকায় এই ব্লগ পাঠক সমাগমের যে সুবিধা পাচ্ছিল, সেই সম্ভাবনাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেওয়া হচ্ছে।
নমস্য ইউজার
ইউজারকে পায়ে ধরে ডাকতে হবে। যে গুগল ক্যান্টিনের আধাবেলার টাকা দিয়ে ১৪ বছর ধরে প্রথম আলো ব্লগ চালানো যাবে, আমি এক সামান্য ইউজারের মেইলের জবাব সেই গুগল দুই ঘন্টার মধ্যে দিয়েছে। দুনিয়া ইউজারের দাস। হ্যাঁ, মহাশয়!
তারপরও চাই
নতুনভাবে নতুন আঙ্গিকে মুক্ত পরিবেশে প্রথম আলো ব্লগ জমে উঠুক পাঠক-লেখকের কোলাহলে। ব্লগ যেন কোনোভাবেই প্রথম আলোর ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন না করে। এক, শ্রেফ একজন ব্লগারও যেন কখনো না ভাবে যে, প্রথম আলো মুক্তচিন্তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শহীদ কাদরীর দুটি বিখ্যাত লাইন আছে এরকম-
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...
আমিও দেই এরকম একটি সতর্কবাণী-
অ্যালেক্সা মিলবে পরিসংখ্যানের সাথে ঠিকই
কিন্তু ব্লগ জমবে না, জমবে না, জমবে না...
বাংলাব্লগের ধরনটিই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে কোনো ব্লগেই সিরিয়াস আলোচনা জমবে না। কিন্তু প্রথম আলো ব্লগে পাঠকের কাছে যা চাওয়া হচ্ছে, তার সারমর্ম এরকম- প্রথম পাতায় দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত, একটি নজরুলগীতি, চারটি কবিতা, তিনটি ফটো ব্লগ আর কথাসাহিত্যের গতিপ্রকৃতি নিয়ে একটি সারগর্ভ প্রবন্ধ। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মাহবুব মোর্শেদ অবতীর্ণ হয়েছেন চৌকিদারের ভূমিকায়- লাঠি হাতে তেড়ে যাচ্ছেন এই পোস্ট থেকে ওই পোস্টে। দিনের পর দিন এই অসংলগ্ন আচরণ দেখে সবকিছু কেন যেন উন্মাদীয় মনে হচ্ছে। তার কারণও কিছু আছে। যেমন-
দিনের পর দিন মাহবুব মোর্শেদ নিজেই তার একটি করে পোস্ট স্টিকি করছেন- এটা দেখতে বেশ অশ্লীল দেখাচ্ছিল অনেকদিন ধরেই। এর প্রতিক্রিয়ায় তার সাদাকালো ছবিটাও ইদানিং অশালীন লাগছে। তবে সামহোয়্যারে নিজের ব্লগে মন্তব্য খরা পুষিয়ে নিতে যদি তিনি এই ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন, তাহলে ভিন্ন কথা।
ইউজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ কেন?
অ্যালেক্সার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রথম আলো ব্লগে হিট একেবারে কম হয়নি। লোকজন এসেছে প্রচুর। প্রথম আলোর মূল কাগজে বিজ্ঞাপন আসাতেও নতুন অনেক ইউজার ঢুঁ মেরেছে ব্লগে। কিন্তু আমার ধারণা, ৮০ ভাগ ইউজারই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে বা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কারণ ইউজাররা নিয়ন্ত্রণ কখনোই পছন্দ করে না। যেমন প্রতি সপ্তাহের রসআলোতে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, তা পাঠককে আকর্ষণও করছে। কিন্তু সেই একই কাজটি প্রথম আলো ব্লগে কেন করা যাবে না? পাঠক-লেখক এই জায়গায় এসে ধাক্কা খাচ্ছে। এরকম হচ্ছে প্রায় সব ক্ষেত্রেই। প্রতিদিন নানাভাবে ৩০ লাখ পাঠকের স্পর্শ পায় যে প্রথম আলো, তার ব্লগে এসে লম্বা চুলো চৌকিদার দেখে পাঠক-লেখক হোঁচট খাচ্ছে- এ খুব সুখকর সংবাদ নয়।
নতুন বোতলে সামহোয়্যারের গ্রুপ ব্লগ?
পাঠককে যে এই ব্লগ আকর্ষণ করছে না, তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ পোস্টে মন্তব্যের খরা। প্রথম আলো ব্লগের দুই-তৃতীয়াংশই (তারও বেশি হতে পারে) সামহোয়্যারের ব্লগার। তারা তো মন্তব্য-বিমুখ নন। তাহলে কেন মন্তব্য আসছে না? এমনিতে সামহোয়্যারের সূচনাপর্বের উদাহরণ প্রথম আলো ব্লগে খাটে না। সামহোয়্যার যখন শুরু হয়েছিল, তখন চারপাশে কেউ ছিল না। কোনো উদাহরণ ছাড়াই বাংলাব্লগ তাদের একটু একটু করে নির্মাণ করতে হয়েছিল। প্রথম আলো ব্লগের সৌভাগ্য যে, বাংলাব্লগের স্বর্ণযুগে তাদের পদার্পণ ঘটেছে। আর দুর্ভাগ্য এই যে, সেই সুযোগটাকে ব্লগ সংশ্লিষ্টরা কাজে লাগাতে পারছে না। এটার চেহারাটা দাঁড়িয়েছে অনেকটা সামহোয়্যারের গ্রুপ ব্লগের মতো। নির্দিষ্ট করে বললে "পজেটিভ বাংলাদেশ" গ্রুপের মতো- পোস্ট আছে, কবিতা আছে, গল্প আছে, মাহবুব মোর্শেদ আছেন, সুমন রহমান আছেন, কিন্তু মন্তব্য নেই। এর সরল অর্থ পাঠক স্বস্তি বোধ করছে না, তারা হতাশ হচ্ছে। বেশিরভাগই লগইনটা করে সামহোয়্যারে গিয়ে বসে থাকছে।
দলিললেখকের নীতিমালা
ব্লগারদের দমন করতে যারা চার-পাঁচ পৃষ্ঠার নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন, তারা কি ভূমি অধিদপ্তরের নেজারত শাখায় দলিললেখক হিসেবে চাকরি করেছিলেন আগে? জমির দলিল তৈরি করতেও তো এখন এতো শর্তাবলী লাগে না। গালি কিংবা অশ্লীল কিছু পোস্ট করা যাবে না এবং স্পর্শকাতর কোনো বিষয় দেওয়া যাবে না- এই তিনটি বিষয় দেখলেই ব্লগে আর কোনো নীতিমালা লাগে না। এমনিতে খোলা ময়দানে অশ্রাব্য গালির ব্যবহার আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না। এক্ষেত্রে মাহবুব মোর্শেদের অবস্থান আমার কাছে ভালোই লেগেছে। আর আছে দাঁড়িপ্রীতি। এই দাঁড়িপ্রীতি প্যাঁচালী ব্লগকে প্রায় ডুবিয়েছে, ঠিক একই কারণে প্রথম আলো ব্লগেরও ডোবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অথচ শুধুমাত্র প্রথম আলো ব্রান্ডটি থাকায় এই ব্লগ পাঠক সমাগমের যে সুবিধা পাচ্ছিল, সেই সম্ভাবনাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেওয়া হচ্ছে।
নমস্য ইউজার
ইউজারকে পায়ে ধরে ডাকতে হবে। যে গুগল ক্যান্টিনের আধাবেলার টাকা দিয়ে ১৪ বছর ধরে প্রথম আলো ব্লগ চালানো যাবে, আমি এক সামান্য ইউজারের মেইলের জবাব সেই গুগল দুই ঘন্টার মধ্যে দিয়েছে। দুনিয়া ইউজারের দাস। হ্যাঁ, মহাশয়!
তারপরও চাই
নতুনভাবে নতুন আঙ্গিকে মুক্ত পরিবেশে প্রথম আলো ব্লগ জমে উঠুক পাঠক-লেখকের কোলাহলে। ব্লগ যেন কোনোভাবেই প্রথম আলোর ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন না করে। এক, শ্রেফ একজন ব্লগারও যেন কখনো না ভাবে যে, প্রথম আলো মুক্তচিন্তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শহীদ কাদরীর দুটি বিখ্যাত লাইন আছে এরকম-
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...
আমিও দেই এরকম একটি সতর্কবাণী-
অ্যালেক্সা মিলবে পরিসংখ্যানের সাথে ঠিকই
কিন্তু ব্লগ জমবে না, জমবে না, জমবে না...
প্রথম প্রকাশ
0 মন্তব্য