পিলখানার ঘটনায় সীমান্তের খুঁটিগুলোই আসলে দুর্বল হয়ে পড়ল


অনেক ঘটনাই ঘটে গেল আজকে পিলখানায়। এখনো দেখার বাকি আরো অনেক কিছু। রাইফেলসের মতো একটি আধা সামরিক বাহিনীতে যে মাপের শৃঙ্খলা আশা করা হয়ে থাকে, এই ঘটনায় দেখা গেল, যে কারণেই হোক না কেন, সেই শৃঙ্খলা আদতে নেই কিংবা শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে দেখে অনেকেই বেশ আনন্দিত হয়েছেন দেখছি। কিন্তু বুঝতে হবে, শেষ বিচারে বাংলাদেশ রাইফেলস "সুজন" নয়, ইউএনডিপির কোনো প্রকল্পও নয়, আবার মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিও নয়। এ ধরনের বাহিনীতে শৃঙ্খলা এবং শৃঙ্খলাই শেষ কথা, এবং তা যে কোনো পরিস্থিতিতে। রাইফেলসে বেতন-ভাতার বৈষম্য ছিল, আরো নানা কারণে অসন্তোষ ছিল। তাদের দাবিও ন্যায়সঙ্গতই। কিন্তু নির্মম সত্যি এটাই যে, আজ যা ঘটল এবং আগামীতে যা যা ঘটবে- তাতে আমার দেশের সীমান্তের খুঁটিগুলোই আসলে দুর্বল হয়ে পড়ল। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এই ঘটনা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হচ্ছে। এতে যতো যাই হোক, একটি আধা-সামরিক বাহিনীর এই বিদ্রোহ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে নিশ্চিতভাবেই চেনাবে অন্যরূপে। সেই রূপ ইতিবাচক নয়। এটা যে কোনো বিচারেই পুরো বাংলাদেশের জন্যই একটি অপমানজনক ঘটনা।

যতো যাই হোক, শৃঙ্খলাই শেষ কথা
রাইফেলসের যে সদস্য আজ মুখোশ পরে টিভি ক্যামেরার সামনে নিজেদের দাবিদাওয়া তুললেন- তার দাবির সঙ্গে একমত- কিন্তু আধা-সামরিক বাহিনীতে থাকার যোগ্যতা তার নেই। সৈনিক মাত্রেই যে কোনো পরিস্থিতিতে তার উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশ মানতে বাধ্য। এর অন্যথা হলে বুঝতে হবে, সেখানে ঘাটতি আছে, বড়ো গলদ আছে। কঠোরতম শৃঙ্খলা না থাকলে বাংলাদেশ রাইফেলস কেন, কোনো বাহিনীই টিকে থাকতে পারবে না। সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন হল- এই ধরনের একটি বিশৃঙ্খল বাহিনী কী করে আমার দেশের সীমান্ত রক্ষার কাজ করবে?

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য করুণা
এতো বড়ো একটি ঘটনা ঘটল, কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এর কোনোই পূর্বাভাস পাবে না- তা কী করে হয়? গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এই ব্যর্থতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনার ব্যাপারে পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়ায়, বিশেষ করে ডিজিএফআই মহাপরিচালকের পদত্যাগ করা উচিত এখনই। এটা একটি অমার্জনীয় ব্যর্থতা তাদের। এই ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য শ্রেফ করুণাই হচ্ছে।

কে প্রতিপক্ষ, কেন প্রতিপক্ষ
সেনাবাহিনীকে আবার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে। প্রেষণে বিডিআরে যাওয়া কোনো কোনো সেনা কর্মকর্তার অন্যায়-দুর্নীতি-অনিয়ম নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু তার জন্য পুরো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে, তাকে হেয় করে অনেকেই একধরনের সুখ অনুভব করছেন। অথচ এই মানুষগুলোই মিয়ানমার এসে বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের জন্য হানা দিলে উদ্বিগ্ন হয়, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানার ভেতরে ঢুকে ভারত জরিপকাজ চালালে এই মানুষগুলোর উৎকণ্ঠা ঝরে পড়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বাদই দিন, ওই যে ভেনেজুয়েলা- একজনমাত্র অপহৃত সৈনিকের জন্য সেখানেও পুরো দেশ প্রার্থনায় বসে। হানাহানি হবেই, ভাই ভাইয়ের বিরুদ্ধে লড়বেই, দ্বন্দ্ব-সংঘাত থাকবেই- কিন্তু সবার আগে দেশ। সবার আগে দেশের স্বার্থ। তবে বলা হয়ে থাকে, নরকে মাত্র একটি প্রকোষ্ঠেই কোনো প্রহরা থাকে না। কারণ সেই প্রকোষ্ঠে বাঙালিদের রাখা হয়। কেউ নরকের দেয়াল টপকে পালাতে চাইলে অন্যরা তাকে টেনে নিচে নামিয়ে আনেন। বোধকরি এজন্যই এশিয়ায় পাকিস্তান-ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সবচেয়ে কম পরিশ্রম করতে হয় একমাত্র বাংলাদেশেই, না চাইতেই যে তাদের কাজগুলো অন্যরা করে দেন। এই না হলে বাঙালি! 

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): bdr mutinybangladesh rifles revoltbangladesh riflesbdr mutiny day ;

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply