রে, এই ডাক্তারদের এতো গরমি কিসের?

মূল ঘটনা হল
দিনাজপুরে কর্মরত বিচারক একেএম ফজলুল হকের স্ত্রী রাবেয়া সুলতানার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হওয়ায় গত শুক্রবার তিনি স্ত্রীকে নিয়ে শহরের বালুবাড়ি এলাকায় চিকিৎসক জাহানারা বেগমের চেম্বারে নিয়ে যান। ওই চিকিৎসক ফজলুল হককে তার স্ত্রীর একটি আলট্রাসনোগ্রাম করে আনার জন্য ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। ফজলুল হক ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় চিকিৎসক জাহানারা তার কাছে ৩০০ টাকা পরামর্শ ফি দাবি করেন। এ সময় ফজলুল হক তাঁকে সরকারি চিকিৎসাসুবিধা বিধিমালার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি ফি নিতে পারেন না। ডা. জাহানারা ফজলুল হকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র চেয়ে বলেন, ফি না দিলে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া যাবে না। স্ত্রীর পেটে প্রচণ্ড ব্যথার কথা বিবেচনা করে ফজলুল হক চিকিৎসককে ৩০০ টাকা ফি দিয়ে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বেরিয়ে যান।
এ ঘটনায় বিচারক ফজলুল হক নিজে আবেদনকারী হিসেবে রাষ্ট্রকে বাদি করে গত রোববার ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দিনাজপুর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। আদালতের আদেশনামায় উল্লেখ করা হয়, “সরকারি কর্মচারীর (চিকিত্সাসুবিধা) বিধিমালা, ১৯৭৪-এর ৪ বিধিতে বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারী অনুমোদিত চিকিত্সক কর্তৃক বিনা খরচে চিকিত্সাসুবিধা পাইবেন।’ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চিকিৎসক জাহানারার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং তা কার্যকর করার জন্য কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

পরের ঘটনা এই
ডা. জাহানারা বেগম মুন্নীর বিরুদ্ধে বিচারকের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার ঘটনায় পুলিশ গত ৩ দিনেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি অথবা ইচ্ছে করেই গ্রেপ্তার করেনি। বাংলাদেশে সাধারণত যা হয়, গতকাল এই ঘটনারও রাজনৈতিকায়ন হয়ে গেল যথারীতি। আজ জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) শীঘ্রই এ মামলার বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। বিএমএ নেতারা বলছেন, দোষ স্বীকার পূর্বক লিখিত আবেদন করে ডা. মুন্নীকে যদি আদালতে হাজির হতে হয়, তাহলে তারা আজ বৃহস্পতিবার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

ডাক্তারের গরমি
বাংলাদেশের জনগণ মাত্রেই জানেন, চিকিৎসা বাণিজ্য কাকে বলে, কতো প্রকার ও কী কী! পেশার প্রতি সৎ- এমন চিকিৎসকও নিশ্চয়ই আছেন আমাদের আশেপাশে। তবে 'ডাক্তার' শব্দটি দেখলেই কেন যেন এক রক্তচোষার ছবি ভেসে উঠে মনে। বিচারক নিজে ভুক্তভোগী হওয়ায় এক রক্তচোষা চিকিৎসকের কাণ্ড আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু এইরকম হাজার হাজার অমানবিক ঘটনা আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যায়। আমরা দেখছি, দিনাজপুরের ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু ওই চিকিৎসক আদালতে হাজির হতে রাজি নন। ক্ষমা প্রার্থনাও করবেন না। ওদিকে ভাড়াটে মাস্তানের মতো বিএমএ আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। যেন তারা আলাদা রাষ্ট্রের বাসিন্দা। যেন এই দেশের আইনকানুন তাদের ওপর প্রযোজ্য নয়। রে, তোদের এতো গরমি কিসের! 

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply