তেজেন্দ্র শীলের ছেলেটা মার্কেটিং জানে না, তাদের জন্য কেউ তাই চোখের জলও ফেলে না

১৮ নভেম্বর ২০০৩। রাত সবে ১২টার ঘর পেরিয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ার একটি ঘরে হঠাৎ দেখা গেল আগুনের ফুলকি। মুহূর্তেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়লো পুরো ঘরে। আগুনের তাপ গায়ে লাগলে সেই ঘরে থাকা ১১ জন মানুষ জেগে ওঠে চিৎকার করে। দরজা ধরে ধাক্কালো তারা, দরজা নড়ে না। আগুন যারা দিয়েছে, আগেই বাইরে থেকে দরজা তারা বন্ধ করে দিয়েছিল। ১১টি মানুষ একটি জানালা ধরে অনেক চেষ্টা করল, জানালা নড়ে না। বাইরে বেরুনোর সব পথ বন্ধ।

চামড়া পুড়ে অনেক আগেই ছাই, তবু শুধু প্রাণটুকু বাঁচানোর জন্য জীবনের শেষ কয়েকটি ঘন্টা যুদ্ধ করল ১১টি প্রাণ - ৭১ বছর বয়সী দেবেন্দ্র শীল, ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ তেজেন্দ্র শীল, ৬০ বছরের বকুল বালা শীল, ৪২ বছরের অনিল শীল, গৃহবধূ স্মৃতি রানী শীল, অনিলের অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে রুমি শীল, ৭ বছর বয়সী সুনিয়া শীল, ৪ দিনের নবজাতক শিশু কার্তিক ও শচীন্দ্র শীলের নববিবাহিত মেয়ে বাবুটি শীল (২৫), দশম শ্রেণীর ছাত্রী প্রসাদী শীল, নবম শ্রেণীর ছাত্রী অ্যানি শীল। পুলিশ এসে ১০টি লাশ, আসলে পুড়ে যাওয়া এক ১০টি মাংসপিণ্ড, উদ্ধার করল সকালে। ৪ দিনের নবজাতক কার্তিকের ছোট্ট শরীরটা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরে অনেক চেষ্টা তদবির করে একটি মামলা হয়েছে বটে, সেই মামলা চলছেই বছরের পর বছর। তদন্ত হয়, কিন্তু পুলিশের রিপোর্টে কিছুই হয় না। আবার তদন্ত হয়, আবার সেই একই ফলাফল। কিছুদিন আগে আদালত আবার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বটে, তবে ওয়াকিবহাল মহল মাত্রেই জানেন, ফলাফলে নড়চড় হবে না। পুলিশের একটিবার সাহস হয়নি, হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জেরা করা, আটক তো দূরের কথা। ঢাকা থেকে ড. কামাল হোসেন গিয়ে একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন শুধু।

-----
বঙ্গবন্ধু হ্ত্যামামলার রায় হল আজ। রায় শুনে খুশি হয়েছি। কোনো হত্যাকাণ্ডই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে দুনিয়া চলছে মার্কেটিংয়ের ওপর। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু হত্যমামলাটিকে ‌'ইভেন্ট' করে তুলেছিল। বলা ভালো, তারা বিষয়টাকে সফলভাবে মার্কেটিং করতে পেরেছে। বাজারে তারা বিষয়টাকে খাওয়াতে পেরেছে- যেভাবেই হোক। আর তাই কর্মীরা সারা রাত জেগে আদালত পাহারা দেয়। প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে মানুষ দিনভর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আপডেট জানার জন্য। রিয়েলটাইমে সাহারা খাতুন ফোন করে কেঁদে ফেলেন।
এই দেশে হত্যামামলা হোক কিংবা গৃহস্থালি পণ্য- সবকিছুই আগে মার্কেটিং করা লাগে। তেজেন্দ্র লালের বেঁচে যাওয়া সন্তান বিমল শীল মার্কেটিং জানেন না। সুতরাং ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা- এই বাজারে এমন কোনো বিষয় নয়। সুতরাং ১৮ নভেম্বর এলে "একযুগেও ১১ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি" শিরোনামের একটি নিরস সংবাদের জন্য আমরা বরং অপেক্ষা করি! 


Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply