ডয়েচে ভেলের প্রতিযোগিতায় বাংলা ব্লগের গরিব অ্যাম্বাসেডর!

১২ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৭:৫১
লুকার বলেছেন: শুভ কে?
১৪ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:৫৬
চিরসুখী বলেছেন: লুকার আপনি ব্লগিং এ এখনো নাবালক।আপনার আব্বাজানকে জিজ্ঞেস করুন ''শুভ কে?"" উনি হয়তো বলতে পারবেন।

'সেরা বাংলা ব্লগার' আলী মাহমেদ শুভ'র পরিচয় জানতে স্পষ্টতই 'আব্বাজান' কিংবা পাড়ার মুরব্বীদের দ্বারস্থ হতে হওয়া ছাড়া আপামর ব্লগারদের বোধহয় উপায় নেই! এতো হৈচৈ করে বাংলাভাষার যে সেরা ব্লগারকে নির্বাচন করা হল, বাংলা ব্লগের 'রাজধানী' সামহোয়্যারইনে তাকে তেমন কেউ চেনেন না। অন্য ব্লগগুলোতেও দেখছি একই অবস্থা। নোটিশবোর্ডের স্টিকি পোস্টে সেই চিরপরিচিত কোলাহলের ছিঁটেফোটা নেই। এ এমন এক 'সেরা বাংলা ব্লগ', বাংলা ব্লগমণ্ডলের সক্রিয় তিন-চতুর্থাংশ ব্লগারই যা সম্ভবত গতকালই প্রথম দেখেছে, তাও নোটিশবোর্ড এবং অন্যান্য প্রচারযন্ত্রের সৌজন্যে।

সেরা ব্লগের গরিবি হাল
কাউন্টার বিশ্লেষণ করে দেখলাম, প্রতি মাসে আলী মাহমেদের ব্লগের পেইজভিউ ১০০০ এর মতো। তার মধ্যে দিনে কমপক্ষে দুবার করে আসা গুগল বট তো আছেই। প্রতি মাসে ভিজিটর বড়জোর ৫০ কিংবা ১০০। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে এই ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ব্লগটিতে পেইজভিউ হয়েছে দশ হাজারের মতো। যার মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ হাজার পেইজভিউ হয়েছে গত কয়েক সপ্তাহে বিবিধ প্রচারণার সুবাদে। পেইজভিউর তুলনায় ভিজিটর নিশ্চিতভাবেই আরো কম। বই বেচাকেনার বাজারে শহীদুল জহির অচেনা হলেও, বেশিরভাগ পাঠক তার নাম না জানলেও প্রথম আলো সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে সেটা বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কারণ কোয়ালিটিই সেখানে শেষ কথা। কিন্তু ব্লগিংয়ে ব্যাপারটা ভিন্ন। সেখানে মিথস্ক্রিয়াই গুরুত্বপূর্ণ সবচেয়ে। পাঠকের অংশগ্রহণ, আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক ছাড়া যে কোনো ব্লগই গুরুত্বহীন। কৌতূহল জাগা খুব স্বাভাবিক, এ কেমন সেরা ব্লগ, যেখানে পাঠকের কোলাহল নেই, সমালোচনা নেই, আলোচনা তো নেই-ই, বিতর্ক তো দূরের? শুভ'র পুরো ব্লগ মিলিয়ে প্রায় ৫০০ লেখায় পাঠকের মন্তব্য ৫০টির বেশি হবে বলে আমার মনে হয় না। ভাবা যায়! শুভ অবশ্য নিজেই সেটা অস্বীকার করেননি, 'তারচেয়ে আমার নিজের সাইটে যখন লিখি, লিখে বড়ো আরাম পাই। বাড়তি চাপ নাই। যে অল্প পাঠক সাইটটা ভিজিট করেন তারা মূলত পড়ার জন্যই আসেন।'

কী ছিল মানদণ্ড?
ডয়েচে ভেলে ব্লগ প্রতিযোগিতায় সেরা ব্লগার নির্বাচনে বিচারকদের মানদণ্ড কী ছিল আমি এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। যে ব্লগে পাঠক নেই, যে ব্লগে আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক নেই, যে ব্লগে এমনকি ভিজিটরও নেই- সেটা কিভাবে সেরা ব্লগ হয়? সাহিত্যমান? তাহলে তো বাংলাদেশের সেরা দুটি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া আহমাদ মোস্তফা কামালের নিজস্ব সাইটটি কিংবা তার নিজস্ব ব্লগটি সেরা ব্লগের পুরস্কার পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য দাবিদার। এমনকি সেই বিবেচনায় সুমন রহমানের বিদ্যাকূট কেন নয়?
সবচেয়ে বড়ো সত্য, যা হয়তো তিক্তই, সেরা বাংলা ব্লগের পুরস্কার পেল এমন একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, যা কিনা আদতে ব্লগ নয়। রেজওয়ানের সঙ্গে কথোপকথনে শুভ নিজেই দ্বিধান্বিত, "অবশ্য আমার লেখাগুলো আদৌ প্রচলিত ব্লগিং-এর পর্যায়ে পড়ে কিনা আমি জানি না।"

অনৈতিক প্রভাব, অবৈধ প্রচারণা?
আরিলকে আমরা শুভ'র পক্ষে এক ধরনের অবৈধ প্রচারণা চালাতে দেখেছি। ব্লগার রেজওয়ানের সাম্প্রতিক স্বীকারোক্তি থেকে আমরা জেনেছি, ডয়েচে ভেলের অন্তত দুজন বিচারকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে তার। এই দুজন বিচারক হলেন আমিরা আল হোসাইনি (বাহরাইনের ব্লগার আর সাংবাদিক) এবং ক্লেয়ার উলরিচ (ফরাসী ব্লগার আর সাংবাদিক)। এই ঘনিষ্ঠতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন গ্লোবাল বাংলা ভয়েসেসের দীনহীন বাংলা সংস্করণে রেজওয়ান আগবাড়িয়ে শুভর সাক্ষাৎকার নিয়ে সরাসরি প্রচারণায় অংশ নেন। প্রসঙ্গত, রেজওয়ানকে আমরা সামহোয়্যারইনবিরোধী একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত বলেই জানি।

শুভ নয়, জিতেছে অশুভ রাজনীতি
তবে আমরা যারা ব্লগের বাইরেও বিশদ খবর রাখি, তারা জানি, আলী মাহমেদ শুভ চমৎকার একজন লোক। লিখেনও খুবই ভালো। প্রকাশিত বই আছে গোটাকয়েক। রাজধানীর বাইরে তুলনামূলক অনগ্রসর ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে একজন লোক প্রায় নিয়মিত অনলাইনে নিজের অনুভূতিমালা লিখছেন- সে তো ভাবলেই অবাক লাগে। সেই শুভকে গত ১৫ এপ্রিল ডয়েচে ভেলে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় সেরা বাংলা ব্লগের পুরস্কারটি পেতে দেখে আনন্দিত হয়েছি অবশ্যই। অন্তর থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই। আমি জানি, শুভ নিজ গুণেই জেতার যোগ্যতা রাখেন, কিন্তু পরশু যে শুভকে আমরা জিততে দেখলাম, তাকে জিতিয়েছে আন্তব্লগীয় কুটিল রাজনীতি, যে রাজনীতি সামহোয়্যারইনের ব্লগারদের সহ্য করে না। সুতরাং এই জয় কুটিল রাজনীতির জয়। বাংলাব্লগ একজন অ্যাম্বাসেডর পেয়েছে ঠিকই, তবে গরিব অ্যাম্বাসেডর।

শেষপর্যন্ত এটা ঈর্ষা নয়, ঘরের আলোচনা
এটা ঘরের আলোচনা এবং এই লেখা কোনো ধরনের ঈর্ষাকাতরতা থেকে নয়। বরং জার্মান মঞ্চে গর্বিত আলী মাহমেদকে দেখার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছি। বলে রাখা ভালো, ওই প্রতিযোগিতায় যাওয়ার মতো যোগ্যই আমি নই। যদিও ভালোবেসে অনেকেই আমাকে ভোট দিয়েছেন ওই প্রতিযোগিতায়। কয়েকজন সুহৃদ সেখানে মন্তব্যও করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি নিতান্তই এক নগণ্য ব্লগার। মানুষের সঙ্গে চলি, মানুষের কথা বলি। বার্লিনের বলরুম নয়, সাধারণ ব্লগারদের সঙ্গে থাকতেই বেশি ভালোবাসি।

সাবমেরিন ক্যাবল কাটা যাওয়ায় গত কয়েকদিন ইন্টারনেট থেকে দূরে ছিলাম। প্রতিক্রিয়া জানাতে তাই দেরি হল।


প্রথম প্রকাশ

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply