স্পষ্টতই, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের মধ্যে যারা মুক্তিযোদ্ধা, তারা যাতে এই সুযোগ না পায়, সেজন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের এই আদেশ। এই মন্ত্রিসভায় মুক্তিযোদ্ধা কেউ আছেন কিনা, আমি মনে করে উঠতে পারছি না। তবে রাজাকার আছে। প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই খন্দকার মোশাররফের বিরুদ্ধে একাত্তরে পাকবাহিনীর দালালির অভিযোগ আছে। বলতে চাই, এই মন্ত্রিসভার সম্মতিক্রমে যে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হল, এটা ঠিক হয়নি।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ১২ জনের মধ্যে চারজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা হচ্ছেন লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর (অব.) শাহরিয়ার রশিদ, মেজর (অব.) নূর চৌধুরী এবং মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম। একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে সর্বপ্রথম ছোট্ট যে দলটি পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যুদ্ধকালের খ্যাতনামা গেরিলা স্পেশালিস্ট শরিফুল হক ডালিম ছিলেন তার একজন। অসামান্য বীরত্বের জন্য তিনি ও তার ভাই স্বপন রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়েছিলেন। এই চারজনের কেউই কলকাতাফেরত বিলাসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, প্রত্যেকেই ছিলেন সম্মুখ সমরের নায়ক। পাকবাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করেছেন নয় নয়টি মাস। তবে তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সুস্পষ্টভাবে। তারা যে বঙ্গবন্ধু পরিবারের হত্যাকারী- এ নিয়ে কোনো দ্বিধা এখন আর নেই, দ্বিধা থাকতে পারেও না। সঙ্গে দ্বিধাহীনভাবে এটাও জানিয়ে দিতে চাই, এরপরও মুক্তিযুদ্ধে এই লোকগুলোর কৃতিত্ব আর বীরত্বগাঁথা একটুও ম্লান হয়ে যায় না। তাদের ওই বীরত্বগাঁথা মুছে ফেলা যায় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করুন, তবে ক্ষমতায় আছেন বলে, রাজদণ্ড হাতে আছে বলে, পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ আছে বলে এই চার মুক্তিযোদ্ধার একাত্তরের অসামান্য কৃতিত্বটুকু খারিজ করে দেবেন না। এই দেশে এখনো বিচার প্রভাবিত হয়, সুতরাং অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও অবিচার করবেন না।
প্রথম প্রকাশ
0 মন্তব্য