ওয়েস্ট ইণ্ডিজ বধ কাব্য : বাংলাদেশের এই জয়ে খাদ আছে

আমার এক সুহৃদ আছেন- জাদুকর। তার একটি মেয়ে আছে- সাত কি আটে পড়েছে। ম্যাজিক শোতে বাবা তাকে সঙ্গী করে নিয়ে যায়। মেয়েটা কখনো ‌‌'তরবারি ম্যাজিকে' চাদরমুড়ি দিয়ে শোয় মঞ্চে, কখনো কান দিয়ে জল বের করার অভিনয় করে। সেই মেয়ে আবার এইটুকু বয়সে ভারি ভারি ম্যাজিকও দেখায়। সেদিন দেখলাম, বাচ্চাদের পত্রিকায় তার নামে ম্যাজিকের লেখা ছাপাও হচ্ছে। আমি আঁতকে উঠি। বাবা নিজে লিখে মেয়ের নামে ছাপতে দিচ্ছে। আমি তাকে বললাম, আপনি মেয়েকে নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দিন। তাকে জোর করে টেনে টেনে তুলবেন না।
এরশাদ যুগে কী এক টুর্নামেন্টে ব্রাজিলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের কিশোর ফুটবল দল। স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে, টুর্নামেন্টের নাম ছিল ডানা-গোথিয়া। বিদেশে জেতা সেই কাপ নিয়ে একদিন আচমকা সারা দেশ উচ্ছ্বাসে ভেঙে পড়ল। তারও কিছুকাল পরে রেকর্ড করা খেলা টেলিভিশনে দেখানো হলে ফিসফাস বাড়ে মানুষের। মুখ চাওয়াচাওয়ি বাড়ে- বাংলাদেশের পক্ষে এরা কারা, আর যাই হোক কিশোর তো নয়! কারো কারো ব্লেডচর্চিত কামানো মুখও প্রায় স্পষ্ট হয়ে উঠছিল রঙিন টেলিভিশনের সৌজন্যে। ব্রাজিলের অনূর্ধ ১৪ দলের বিপক্ষে আসলে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশের অনূর্ধ ২০-২৪! ওই যে টেনে টেনে তোলার স্বভাব আমাদের।

বাংলাদেশের ক্রিকেটেরও হয়েছে সেই দশা। বাংলাভূমির ক্রিকেট নিজের মতো করে গড়ে উঠছে না, তাকে তোলা হচ্ছে টেনে টেনে। ওয়েস্ট ইণ্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের শেষদিকে নিউজ ফিডে দেখলাম, বাংলাদেশ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তৎক্ষণাৎ ক্রিকইনফোতে গিয়ে স্কোরকার্ড দেখেছি বটে, কিন্তু না, এই বিজয়ে মন নেচে উঠেনি! বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা এমনকি ওয়েস্ট ইণ্ডিজের ‌‌‌'এ' দলও নয়, মূল ক্রিকেটারদের সঙ্গে ধর্মঘটে তারাও যোগ দিয়েছিল। এবার যে দলটি খেলল, আমার স্বল্পজ্ঞানে সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের 'বি' কিংবা 'সি' টিম। হতে পারে এটা অফিসিয়াল টেস্ট কিংবা ওয়ানডে, হতে পারে দেশের জয়, কিন্তু এটা খেলা ছিল না। সত্যিকারের ক্রিকেট অনুরাগী এই জয়ে তৃপ্তি পাবেন না।

সবাই জানেন, বাংলাদেশ যে টেস্ট স্ট্যাটাস পেল, সেটা ক্রীড়ানৈপূণ্যের কৃতিত্বে নয়, সেটা ছিল শুধুই ক্রিকেট কূটনীতির সাফল্য- সাবের হোসেনদের সাফল্য। সমান দাবিদার, এমনকি অগ্রগণ্য হওয়ার পরও কেনিয়া যে টেস্ট স্ট্যাটাস পায়নি, সেটাও তাদের ক্রিকেট কূটনীতিরই ব্যর্থতা। আজকাল স্ট্যাটাস এমনি এমনি পাওয়া যায় না। তার জন্য বাজার থাকা লাগে। পকেট কাটার মতো যথেষ্ট মানুষ আছে কিনা তাও দেখা লাগে বিশ্ব ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের। সুতরাং অভিবাসী দলবল নিয়ে আরব আমিরাতও একদিন টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যাবে, কিন্তু কেনিয়া হারবে, যতো নৈপূণ্যই তারা দেখাক। ওই যে কূটনীতি আর বাজার! সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশ এই দুটোতেই বলীয়ান। বাংলাদেশের ক্রিকেট যাওবা উঠছে, তাও এই কূটনীতি আর বাজারের কারণেই, নৈপূণ্যে কিছুতেই নয়।

তবে হ্যাঁ, নিত্য দুঃসংবাদের দেশ বাংলাদেশে তেমন সুখবর আমরা সাধারণত পাই না। তাই এইসব খড়কুটো ধরে আনন্দ পেতে চেষ্টা করি এবং এক ধরনের আনন্দ প্রকাশের ভান করি। এই দফা ওয়েস্ট ইণ্ডিজ বধের পর বাংলাদেশে যা হচ্ছে এবং হবে- সেটা নিশ্চিতভাবেই ভান, আসল নয়! চাই লড়াকু বাংলাদেশকে দেখতে- ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা শ্রীলংকা যেমন।

====
আমার কথায় কেউ কষ্ট পেলে দুঃখিত। মাইনাসও নিশ্চয়ই প্রচুর আসবে। আসুক। চাই যে, উল্টো পিঠেও কিছু লেখা থাকুক। মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখার দরকার আছে।

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): ওয়েস্ট ইন্ডিজবাংলাদেশ ক্রিকেট টিমক্রিকেটটেস্ট স্ট্যাটাসwest indiescricketbangladesh cricket teamtest status ;

প্রথম প্রকাশ

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply