সন্তু লারমার এই হুমকি অগ্রহণযোগ্য, তার কথার সুরও অবমাননাকর

নশ্বর এই পৃথিবীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক যে কোনো রচনাই শুরু হয় ধরাবাঁধা ১৯০০ সাল থেকে, ঐতিহাসিক চিউয়িংগাম টেনে টেনে। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মাহাত্ম্য ঘুরে সেই রচনা খানিকটা দম নেয় কংগ্রেসী আন্দোলনে এসে। তারপর নানান ইতিহাসের চিপাগলি বেয়ে একাত্তর সালটাকে একটু পাশ কাটিয়ে সোজা জনসংহতি সমিতির অন্দরমহলে! রচনার শেষের লাইনটি প্রায়ই এইরকম হতাশা দিয়ে শেষ হয়- "অতঃপর উহারা কি আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইবে?" যতো ভারি ভারি নিরর্থক শব্দ, কারণে-অকারণে যতো বেশি কান্নাকাটি - পার্বত্য রচনাও ততো হিট। মোট কথা, রচনা বা ইতিহাস এমনভাবে লিখতে হয়, পাঠক যেন কোনোমতেই কিছু বুঝে উঠতে না পারে। সেনা প্রত্যাহার থেকে ভূমি বন্টনসহ যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিতে হবে একলাইনে!

আমরা মূর্খ মানুষ, অতো শতো বুঝি না, ভাষার মারপ্যাঁচ অতো জানি না। তবে আর্মি ক্যাম্পের সামনে বাস থামিয়ে ট্রাইবাল মহিলার গালে সেনাসদস্যের অকারণ চড় দেখেছি, উর্দিপরা মানুষের নৃশংসতা দেখেছি। আবার সাধারণ মানুষের ওপর শান্তিবাহিনীর নারকীয়তাও দেখেছি। আমি অনেক কাছ থেকে মিশে দেখেছি, বেশিরভাগ পাহাড়িই মূলত সরল। এখনো দিনেদুপুরে মানুষ খুন হয়, এমন জায়গায় গিয়ে পাহাড়ি পরিবারের অকাতর ভালোবাসা পেয়েছি। পাহাড়ের বাঙালিদেরও কাছ থেকে দেখেছি - হারামির হারামি! তাদের নিঃশ্বাসে কেবলই বিদ্বেষের বিষবাষ্প দেখেছি- বহুবার, বহুভাবে। লংগদুতে গর্ভবতী মহিলার পেট চিরে কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছিল- হাসিমুখে সেই গল্প শুনেছিয়েছিলেন পরিচিত এক বাঙালি।

পাহাড়িদের নেতা সন্তু লারমা সংগ্রামী মানুষ, হুমকিপ্রিয়ও, কথায় কথায় সশস্ত্র সংগ্রামের ভয় দেখাতে ভালোবাসেন। আজ বুধবার রাঙামাটির সমাবেশে সন্তু লারমা হুঁশিয়ারি দিলেন, ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করা না হলে আবারো তারা পার্বত্য অঞ্চলে নতুন করে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করবেন। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে তার জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে বলেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।

ইউপিডিএফের যারা সমর্থক, তাদের সকলেই পাহাড়ি। তারাও একসময় জনসংহতির সমিতির অংশ ছিল। কে না জানে, শূন্য থেকে ইউপিডিএফ আজ রীতিমতো জনপ্রিয় সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে। তাও মূলত সন্তু লারমাদেরই অবদান। এই এখনো সন্তু লারমা কিংবা রূপায়ন দেওয়ানদের চাঁদা না দিয়ে খুব কম ভাগ্যবানেরই সুযোগ আছে পার্বত্য চট্টগ্রামে (বিশেষ করে রাঙামাটিতে) কিছু করা - হোক সে সাহায্য সংস্থার কাজ কিংবা ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য। সেই খবরও আমাদের অজানা নয়। ঠিকাছে, চাঁদাবাজি নেই কোথায়! একআধটু চলছে, চলুক না ভেবে পাশ কাটিয়ে যাই। কিন্তু সন্তু লারমার আজকের হুঁশিয়ারি, তার ভাষা, তার হুমকিটা ভালো লাগল না মোটেই। এটা অগ্রহণযোগ্য ও অবমাননাকর। সশস্ত্র আন্দোলনের হুমকি তো রাষ্ট্রদোহিতার পর্যায়েই পড়ে বলে শুনেছি!

ছবি : বাংলার চোখ

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): chittagong hill tractsrangamatikhagracharibandarbanchthill tractsantu larmajssupdfchittagongপার্বত্য চট্টগ্রামরাঙামাটিরাঙ্গামাটিখাগড়াছড়িবান্দরবানবান্দরবনসন্তু লারমাইউপিডিএফজেএসএসজনসংহতি সমিতিচট্টগ্রামচিটাগাং ;
প্রথম প্রকাশ

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply