অপরাজেয় এইসব মায়ের মুখ...

বহুবার হাতে-পায়ে ধরে চেয়ারম্যান-মেম্বারের সালিশ থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন ছেলেকে। রাতভর থানার বারান্দায় পড়ে থেকে বিস্তর অনুনয়-বিনয় করে ছেলেকে হাজত মুক্ত করেছিলেন একবার। অতিষ্ট মা শেষমেশ প্রতিজ্ঞাই করেছিলেন - এই ছেলের মুখ আর দেখবেন না। তবু ছেলেটা চুরির মামলায় জেলে আছে শুনে মায়ের মন আর মানছিল না। টিকিটের টাকা জমিয়ে কান্না চেপে মা উঠে বসেন দুরপাল্লার বাসে। কারাগারের গেটে পুরো একবেলা বসে থেকে অবশেষে শরীর ভেঙে পড়া বৃদ্ধা জানতে পারেন জেলে সব দিনে আসামির দেখা পাওয়া যায় না। জানেন তিনি, এই ব্যস্ত ঢাকা শহরে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তার। তবু ছেলেকে একনজর না দেখে গ্রামে ফিরবেন না। মা তো!



এর চেয়ে মমতামাখা, এর চেয়ে নিরাপদ, এর চেয়ে নিশ্চিন্ত আশ্রয় পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।



বাচ্চাকে এক হাতে আগলে রেখে আরেক হাতে প্রাণপণ সংগ্রাম এই মায়ের। নিডো নয়, হরলিকস নয় - শুঁটকির বিদঘুটে গন্ধে শুধুই দু বেলা ভাত জোগাড়ের সংগ্রাম!



জেলে যেতেই হবে - আদালতের আদেশ। কোমরে রশি বেঁধে পুলিশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভ্যানের দিকে। মা তবু আশা ছাড়েন না। সকাতর অনুনয় নিয়ে পুলিশের পেছন পেছন ছুটতে থাকেন...



বস্তি পুড়ে ছাই, নিজের ঝুপড়ি থেকে এক টুকরো জিনিসও অবশিষ্ট পাওয়া যায়নি। ঘরে দুই বাচ্চা। তাদের বাবা থেকেও যেন নেই। মাসে-ছয় মাসে হঠাৎ হঠাৎ আসেন। নিঃস্ব হয়েও এই মা দমে যাওয়ার পাত্র নন। ছাই সরিয়ে পোড়া টিন কুড়িয়ে আবার তার বাঁচার যুদ্ধ শুরু হয়...



পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া ছেলেটাকে আবার কোর্টে আনা হবে শুনে ছুটে এসেছিলেন আদালতে। কোথায় ছেলে আর কোথায়ই বা আদালত - বৃদ্ধা জানেন না তার কিছুই। জনে জনে তার ছেলেমানুষি জিজ্ঞাসা - 'আমার পোলাডারে কোনদিকে পামু?' কার অতো সময় আছে উদ্বেগাকুল এই মায়ের শিশুসুলভ জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়ার!



৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। উপকূল থেকে ছুটছে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ঝুম বৃষ্টির ভেতর দিয়ে ধাবমান মায়ের এক হাত ছাতায়, আর এক হাত পরম মমতায় আগলে রেখেছে বাচ্চাটাকে, তোয়ালের ভেতর। একটুকু আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে হবে আরো জোরে...



এই সম্পর্কের কোনো তুলনা হয় না!



ভালো থেকো মা, ভালো থেকো...


প্রথম প্রকাশ

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply