যে কারণে খালেদা জিয়া ই-ভোটিংয়ের তীব্র বিরোধিতা করছেন


গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। কেন মেনে নেওয়া হবে না, সেটা স্পষ্ট নয়। ই-ভোটিংয়ের সুবিধাগুলো যেমন আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু দলের জন্যই সমান, অসুবিধাগুলোও সমান। ই-ভোটিংয়ে আওয়ামী লীগ যদি কারচুপি করে, বিএনপিরও সেই একই কারচুপি করার সুযোগ আছে। তাহলে কেন বিরোধিতা? অনেক ভেবেচিন্তে দুটো বিষয় অনুমানের চেষ্টা করলাম-
অনুমান ১ : উপদেষ্টাদের কেউ কেউ তাকে ধারণা দিয়েছেন, ই মানে ইলেকট্রনিক। এবং এই ভোট দিতে হলে আপনাকে কম্পিউটার চালানো শিখতে হবে। কিন্তু এই বয়সে তার পক্ষে মোটেও সেটা সম্ভব নয়। বরং তাকে কম্পিউটার শেখানোর চেষ্টাটা রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হবে।
অনুমান ২ : খালেদা জিয়া বিএনপিপন্থী ব্লগারদের মাধ্যমে জেনেছেন, সম্প্রতি ডয়চে ভেলে ইলেক্ট্রনিক জালভোট প্রতিযোগিতায় ব্যাপক কারচুপির ঘটনা ঘটেছে। চোখের সামনে এইরকম একটি উদাহরণ থাকার পর তিনি কিভাবে ই-ভোটিং মেনে নিতে পারেন?

মনে পড়ে, মনে পড়ে...
মনে পড়ে, ১৯৯২ সালে যখন বাংলাদেশকে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-উই-২) সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন এই খালেদা জিয়াই সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অজুহাত ছিল - ইমেইলের মাধ্যমে দেশের গোপনীয় তথ্য পাচার হয়ে যাবে! পাশের শ্রীলংকা ও ভারত ওই লাইনে ঠিকই যুক্ত হয়। এরপর সিঙ্গাপুর ও ফ্রান্স টেলিকম আরো একটি সাবমেরিন ক্যাবল লাইন (সি-মি-উই-৩) স্থাপনের উদ্যোগ নেয় ১৯৯৪ সালে। বাংলাদেশ সেখানেও যুক্ত হয়নি। অজুহাত ওই একই- দেশের গোপনীয় তথ্য পাচার হয়ে যাবে! এরপর ২০০৬ সালের ২১ মে বাংলাদেশের উপলব্ধি হয় যে, সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া দরকার। আর তাতে খরচ হল দরিদ্র এই দেশের মূল্যবান এক হাজার কোটি টাকা। শ্রেফ এই খালেদা জিয়ার বোকামির চড়া মাশুল।

মানুষের ক্ষোভ কোথায় বিএনপি জানে না
মানুষের ক্ষোভ কোথায়, মানুষের দুঃখ কোথায় - সেটা বিএনপি কখনোই বোঝেনি, বুঝতেও চায়নি। অথচ নিজের একটি বাড়ির জন্য খালেদা জিয়া ঈদের সময়টাতেও হরতাল ডাকতে দ্বিধা করেননি। এখনও যদি জরিপ হয়, এই বাড়ি ইস্যুতে অন্ধ বিএনপি সমর্থক ছাড়া বিএনপিরই সবগুলো ভোট খালেদা পাবেন না। নৃংশসতার নির্মম শিকার এক দরিদ্র কলেজছাত্রকে নিয়ে সাহারা খাতুন আর তার রেব শ্রেফ মাস্তানি করে যাচ্ছে। সেটা নিয়ে বিএনপি চাইলে ক্ষুব্ধ মানুষের মন জয় করতে পারতো। কিন্তু না, তারা আছে তারেক-কোকোর দুর্নীতি মামলা নিয়ে অহর্নিশ কান্নাকাটিতে। কৃষ্ণগহবরের কসম, মানুষের কাছে এইসব ইস্যুর দু পয়সার মূল্য নেই।
শেয়ারবাজারের অরাজকতা নিয়ে ক্ষুব্ধ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। লাখ লাখ মানুষ শেয়ার-ডাকাতদের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। সেটা নিয়ে বিএনপির কোনো মাথাব্যাথা নেই। একটি সংবাদ সম্মেলন তারা করেছিল বটে, সেখানেও মূর্খতাই স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে। প্রথমে চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী শেয়ারবাজারের তদন্ত প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করা হল। এর পরপরই আবার তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন যদি প্রত্যাখ্যানই করা হয়, সে অনুযায়ী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারই বা কেন হবে? শীর্ষ শেয়ার-ডাকাত মোসাদ্দেক আলী ফালু খোদ খালেদা জিয়ার আপনজন। এই মূহুর্তে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের মতোই আচরণ করতো দলটি।



কেন প্রযুক্তি বিরোধিতা?
ই-ভোটিং বা ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ের বিরোধিতা কেন? কেন দেশকে টেনে টেনে পিছনে নিয়ে যাওয়া? বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা? নাকি অজ্ঞতা? যদি বিএনপি মনে করে যে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়, তারা জালিয়াতি করতে পারে, তাহলে আন্দোলন হোক বরং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রযুক্তির বিরোধিতা কেন? প্রযুক্তির যদি কোনো গলদ থাকে, কোনো সীমাবদ্ধতা থাকে, তাহলে সেটা বিএনপির জন্য যেমন সমস্যা, আওয়ামী লীগের জন্যও কি নয়?

নিজেদের অজ্ঞতা-অক্ষমতা ঢাকতে গিয়ে প্রযুক্তির বিরোধিতা করবেন না, নিজ হাতে দেশকে আর পিছিয়ে দেবেন না, হে অষ্টম শ্রেণী!

ই-ভোটিং নিয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা
চট্টগ্রামের নির্বাচনে ই-ভোট : সফলসূচনা
ই-ভোটিং যুগে বাংলাদেশ
দ্রুত ভোট দ্রুত গণনা
একটি ওয়ার্ডে বোতাম টিপে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি সম্পন্ন
চট্টগ্রামে ইলেকট্রনিক ভোটের মহড়া
আগামী সংসদ নির্বাচনে বড় পরিসরে ই-ভোট


প্রথম প্রকাশ

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply