গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নামে রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা খারাপ কিছু নয়। স্বাধীনতার ঘোষক এমএ হান্নানের নামে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামকরণ হতেই পারে। একে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করাটা বিএনপির 'হারামি' বলেই গণ্য করি। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে কিশোরগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামের নামকরণ করাটাকেও অস্বাভাবিক মনে করি না। বরং সৈয়দ নজরুলের অবদানের তুলনায় এটা খুবই সামান্য প্রতিদান। পঞ্চগড় জেলার স্টেডিয়ামটি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেরাজুল ইসলামের নামে নামকরণ হতেই পারে। এটা তার প্রাপ্য।
নির্লজ্জতার বিএনপি স্টাইল
ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপিও নির্লজ্জতার প্রদর্শনীই করেছে যথারীতি। ফলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল রাতারাতি হয়ে গিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার নামে। ফেনীর ফুলগাজি মহিলা কলেজ হয়ে গিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া মহিলা কলেজ। চন্দ্রিমা উদ্যান হয়েছে জিয়ার নামে। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনটি হয়ে গেছে শহীদ জিয়া মিলনায়তন। ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্টেডিয়ামও নিশ্চয়ই বিএনপির পাছায় জ্বালা ধরিয়েছিল, ফলে সেটি হয়ে গিয়েছিল শুধুই ফেনী জেলা স্টেডিয়াম। চামচাগুলোও বাদ যায়নি। সিলেট অডিটরিয়ামের নাম হয়েছে এম সাইফুর রহমান অডিটরিয়াম! এমনকি পুলিশের মনোগ্রামে নির্দোষ নৌকাটিও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
পালা এবার শেখ হাসিনার
শেখ হাসিনার সরকার আগের বারের মতো এবারও নামকরণের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামের নতুন নামকরণ হচ্ছে শেখ কামাল স্টেডিয়াম। জাতীয় যুবকেন্দ্র হতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা জাতীয় যুবকেন্দ্র। এসটি খিজির ১, ২ ও ৩ ফেরির নাম আবার যথাক্রমে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের নামে। এসটি খিজির ৪ ফেরির নাম আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলের নামে এসটি শহীদ সুকান্ত বাবু ফেরি। কাজী মোতাহার হোসেন স্মৃতি মিলনায়তন দাঁড়াচ্ছে গোপালগঞ্জ শেখ ফজলুল হক স্মৃতি মিলনায়তনে। ভাসানী নভোথিয়েটার আবার বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের নামকরণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। বিবি আয়শা (রা.) মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমির নতুন নাম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি। দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নামকরণ হচ্ছে শেখ রাসেলের নামে। কক্সবাজারে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের নাম বদলে হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়াম শেখ হাসিনার আত্মীয় আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নামে, খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম শেখ আবু নাছেরের নামে, ধানমণ্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভ্রাতৃবধু সুলতানা কামালের নামে,
বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কারো স্বীকার-অস্বীকারের ওপর নির্ভর করে না। তাকে কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না- এমনই তার অবদান। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পুরো আওয়ামী লীগই এখনো বস্তুত টিকে আছে শেখ মুজিবের ওপরই। কিন্তু এক ১৫ আগস্ট নিয়ে ত্যানা প্যাঁচানি আর কতো? ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শোকাবহ ও মর্মন্তুদ ঘটনা নিঃসন্দেহে। কিন্তু চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১১ জনকে যে পুড়িয়ে মারা হল, সেটাও কেন সমান শোকাবহ নয়? কেন তাদের নামে রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নামকরণ হবে না? নাকি বাংলাদেশ শেখ পরিবারের বন্ধকী সম্পত্তি?
অমর হওয়ার ভালো পদ্ধতি
মন্ত্রণালয়গুলো তারা নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে করে নিতে পারেন। অমর হওয়ার এটাই, আমার ধারণা, সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। যেমন শেখ কামাল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শেখ জামাল অর্থ মন্ত্রণালয়, বেগম ফজিলাতুন্নেছা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, এমনকি শেখ হাসিনা নিজেও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়টা নিজের নামে করে নিতে পারেন। তাছাড়া আজিমপুর গোরস্থান, মেঘনা সেতুও বোধহয় নামকরণ থেকে বাদ আছে।
যে প্রশ্নের উত্তর নেই
উত্তর পাবো না জেনেই কখনো প্রশ্ন করি না, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নির্ঘুম দিনরাত কেটেছিল যার, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের অপরাধ কী? বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ জামাল-শেখ কামালের চেয়ে কম কী কৃতিত্ব একজন তাজউদ্দিনের? এক সিলেট বিমানবন্দর ছাড়া মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে আর কোথাও দেখতে পাই না কেন? জানতে চাই না, দুঃসাহসী সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ কোথায়? প্রশ্ন তুলি না, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে কিংবদন্তী হয়ে ওঠা মেজর হায়দারের নামে কী হয়েছে এই বাংলাদেশে? মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ জগৎজ্যোতির অবদান কি এতোই নগণ্য যে, প্রথম আলোর ছুটির দিনে আর সামহোয়্যারইনের স্টিকি পোস্টেই কেবল ঠাঁই হয় অসমসাহসী এই গেরিলার?
নির্লজ্জতার বিএনপি স্টাইল
ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপিও নির্লজ্জতার প্রদর্শনীই করেছে যথারীতি। ফলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল রাতারাতি হয়ে গিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার নামে। ফেনীর ফুলগাজি মহিলা কলেজ হয়ে গিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া মহিলা কলেজ। চন্দ্রিমা উদ্যান হয়েছে জিয়ার নামে। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনটি হয়ে গেছে শহীদ জিয়া মিলনায়তন। ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্টেডিয়ামও নিশ্চয়ই বিএনপির পাছায় জ্বালা ধরিয়েছিল, ফলে সেটি হয়ে গিয়েছিল শুধুই ফেনী জেলা স্টেডিয়াম। চামচাগুলোও বাদ যায়নি। সিলেট অডিটরিয়ামের নাম হয়েছে এম সাইফুর রহমান অডিটরিয়াম! এমনকি পুলিশের মনোগ্রামে নির্দোষ নৌকাটিও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
পালা এবার শেখ হাসিনার
শেখ হাসিনার সরকার আগের বারের মতো এবারও নামকরণের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামের নতুন নামকরণ হচ্ছে শেখ কামাল স্টেডিয়াম। জাতীয় যুবকেন্দ্র হতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা জাতীয় যুবকেন্দ্র। এসটি খিজির ১, ২ ও ৩ ফেরির নাম আবার যথাক্রমে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের নামে। এসটি খিজির ৪ ফেরির নাম আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলের নামে এসটি শহীদ সুকান্ত বাবু ফেরি। কাজী মোতাহার হোসেন স্মৃতি মিলনায়তন দাঁড়াচ্ছে গোপালগঞ্জ শেখ ফজলুল হক স্মৃতি মিলনায়তনে। ভাসানী নভোথিয়েটার আবার বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের নামকরণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। বিবি আয়শা (রা.) মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমির নতুন নাম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি। দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নামকরণ হচ্ছে শেখ রাসেলের নামে। কক্সবাজারে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের নাম বদলে হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়াম শেখ হাসিনার আত্মীয় আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নামে, খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম শেখ আবু নাছেরের নামে, ধানমণ্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভ্রাতৃবধু সুলতানা কামালের নামে,
বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কারো স্বীকার-অস্বীকারের ওপর নির্ভর করে না। তাকে কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না- এমনই তার অবদান। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পুরো আওয়ামী লীগই এখনো বস্তুত টিকে আছে শেখ মুজিবের ওপরই। কিন্তু এক ১৫ আগস্ট নিয়ে ত্যানা প্যাঁচানি আর কতো? ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শোকাবহ ও মর্মন্তুদ ঘটনা নিঃসন্দেহে। কিন্তু চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১১ জনকে যে পুড়িয়ে মারা হল, সেটাও কেন সমান শোকাবহ নয়? কেন তাদের নামে রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নামকরণ হবে না? নাকি বাংলাদেশ শেখ পরিবারের বন্ধকী সম্পত্তি?
অমর হওয়ার ভালো পদ্ধতি
মন্ত্রণালয়গুলো তারা নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে করে নিতে পারেন। অমর হওয়ার এটাই, আমার ধারণা, সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। যেমন শেখ কামাল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শেখ জামাল অর্থ মন্ত্রণালয়, বেগম ফজিলাতুন্নেছা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, এমনকি শেখ হাসিনা নিজেও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়টা নিজের নামে করে নিতে পারেন। তাছাড়া আজিমপুর গোরস্থান, মেঘনা সেতুও বোধহয় নামকরণ থেকে বাদ আছে।
যে প্রশ্নের উত্তর নেই
উত্তর পাবো না জেনেই কখনো প্রশ্ন করি না, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নির্ঘুম দিনরাত কেটেছিল যার, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের অপরাধ কী? বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ জামাল-শেখ কামালের চেয়ে কম কী কৃতিত্ব একজন তাজউদ্দিনের? এক সিলেট বিমানবন্দর ছাড়া মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে আর কোথাও দেখতে পাই না কেন? জানতে চাই না, দুঃসাহসী সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ কোথায়? প্রশ্ন তুলি না, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে কিংবদন্তী হয়ে ওঠা মেজর হায়দারের নামে কী হয়েছে এই বাংলাদেশে? মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ জগৎজ্যোতির অবদান কি এতোই নগণ্য যে, প্রথম আলোর ছুটির দিনে আর সামহোয়্যারইনের স্টিকি পোস্টেই কেবল ঠাঁই হয় অসমসাহসী এই গেরিলার?
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, শেখ রেহানা, পুতুল, শেখ মুজিব, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, sheikh mujib, awami league, sheikh hasina, putul, khaleda zia, bnp ;
প্রথম প্রকাশ
0 মন্তব্য