বিদ্যুৎ দে, হারামজাদা!

কয়েক দশকব্যাপী বিশৃঙ্খলা, বিশেষ করে গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের লুটপাটে বিদ্যুৎ খাতে এক দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল আগেই। মাঝখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও পরিস্থিতি প্রায় একই ছিল। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে তেমন কোনো পদক্ষেপই ছিল না তাদের। কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন ওই সময়টায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তুলনামূলক সহনীয় ছিল। এবার ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রতিশ্রুতিও ছিল বিদ্যুৎ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন। বিধি বাম! ক্ষমতায় আরোহণের মাত্র কয়েক মাসেই বিএনপি সরকারের দুঃসহ সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। অন্তর্ঘাত কিনা কে জানে, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির দ্রুতই অবনতি ঘটছে সারা দেশেই। সারা দেশের বিদ্যুৎ চুষে আনা হয় যে ঢাকায়, সেই ঢাকাতেই এখন প্রতিটি এলাকায় তিন-চার দফা কিংবা তারও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। অন্য বিভাগীয় শহরের অবস্থা এর চেয়ে খারাপ। আর গ্রামের পরিস্থিতি তো বলাটাই বাহূল্য।

সরকারের ব্যর্থতা যেখানে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজির শিক্ষক ও বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ নুরুল ইসলাম আজ প্রথম আলোতে বলেছেন - "দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বর্তমান সমস্যা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। তাই এ সমস্যার সমাধানও রাতারাতি সম্ভব নয়। দেশবাসী তা আশাও করে না। কিন্তু সংকট মোকাবিলায় সরকারের কিছু পদক্ষেপ দেশবাসী আশা করে, যা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। বরং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের কার্যক্রমে কিছুটা হলেও সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
এই সমন্বয়হীনতা মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের মধ্যে আছে। আছে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। সমন্বয়হীনতা আছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
এই সমন্বয়হীনতার বড় উদাহরণ হতে পারে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি। মাস তিনেক আগে যে খনি থেকে রেকর্ড পরিমাণ কয়লা উত্তোলিত হলো, সেটি প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ হয়ে থাকবে কেন? কেন এই কারণে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে?...
এভাবে হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান সরকার নিশ্চিত করবে কীভাবে? এখন তো বিদ্যুৎকেন্দ্র করার আগে দরকার জ্বালানির সংস্থান করা। সেই উদ্যোগ কি সরকারের আছে?
শোনা যাচ্ছে, সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের পরিচালক (অপারেটর) কেয়ার্ন এনার্জিকে সরকার অনুমতি দিতে চায় তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রি করার। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের যে একটি ভয়াবহ পরিণতি রয়েছে, সে কথা সরকারকে বিবেচনায় রাখতে হবে। আজ কেয়ার্নকে এই অনুমতি দিলে কাল আরও কোনো কোম্পানিকে তা দিতে হবে। আর এই তৃতীয় পক্ষ যে শেষ পর্যন্ত বিদেশি ক্রেতা হবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কী। অর্থাৎ কেয়ার্নকে এই অনুমতি দেওয়ার সুত্র ধরে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় রাউন্ডের অধীনে সমুদ্রবক্ষের গ্যাস রপ্তানির একটি ক্ষেত্রও তৈরি হতে পারে।
যেখানে দেশীয় কোম্পানির উৎপাদিত প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম সাত টাকার বেশি দিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয় আগ্রহী নয়, সেখানে কেয়ার্নকে ভবিষ্যতের উৎপাদিত গ্যাসের দাম পিএসসির নির্ধারিত মূল্য ২১০ টাকার চেয়েও বেশি পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ সরকারের কাজে সমন্বয়হীনতার আরেকটি বড় উদাহরণ।"

কোথায় যাবে মানুষ?
অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে শেখ হাসিনার সরকার আন্তরিক নয়। বরং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে ছেলেখেলা খেলছে। তবে এই সময়ের সবচেয়ে বড়ো আশঙ্কাটি হল, গ্রীষ্মের আগেই যেখানে এই নারকীয় অবস্থা, সেখানে পুরোদমে গ্রীষ্ম শুরু হলে মানুষ কোথায় যাবে? এই মানুষগুলোই প্রবল উৎসাহে মহাজোটকে ভোট দিয়েছিল সুদিন ফিরে পাওয়ার আশায়। কী হবে তাদের?

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): শেখ হাসিনাআওয়ামী লীগলোডশেডিংবিদ্যুৎawami leaguesheikh hasinaload shedding ;

প্রথম প্রকাশ

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply