পরিবারতন্ত্রের চক্র থেকে বেরোতেই পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া বাগেরহাট-১ আসনে তার চাচাতো ভাই শেখ হেলালউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এখন তা শুধুই আনুষ্ঠানিকতার বিষয়। আগামী ১৭ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।

চমকজাগানো মন্ত্রিসভার পর শেখ হাসিনা যতোটা আলোড়ন তুলেছিলেন, অনেকেই ভাবছিলেন তিনি প্রথা ভেঙে বদলে যাচ্ছেন, আধুনিক হয়ে উঠছেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পরিবারতন্ত্রের চক্র থেকে তিনি আদৌ বেরোতেই পারেননি। ফলে নিজের ছেড়ে দেওয়া আসনের উপনির্বাচনে চাচাতো ভাইকে জিতিয়ে আনা তাঁর জন্য জরুরি।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দলের দুই নেতাকে উপাচার্য পদ উপহার দেওয়া তাঁর জন্য খুবই জরুরি।

শেখ হেলাল নামের এই লোকটিকে আমরা আগে রাজনীতির ময়দানে দেখিনি। তার কী গুণ তাও আমাদের অজানা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে দেখা গেছে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হেলাল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ তুলেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। একটি গুণই সম্ভবত তার আছে, সেটি হল তিনি প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই!

শেখ হেলালকে সংসদে আনতে প্রধানমন্ত্রী কিংবা তার নিকটজনেরা কতোটা মরিয়া, সেটা বোঝা যায়, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় তার নির্বাচিত হওয়া দেখে। বাগেরহাট-১ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দুজনের (একজন স্বতন্ত্র ও অপরজন বিএনপির) মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে আপিলের সুযোগ ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তারা আপিল করতেও অনাগ্রহ দেখিয়েছেন। হতে পারে গোপন সমঝোতা হয়েছে, কিংবা হতে পারে ওই দুই প্রার্থী প্রকৃতই অযোগ্য ছিলেন।

তাহলে কি পরিবারের কারো রাজনীতিতে আসা মানেই দোষ? না। শেখ পরিবারের শেখ সেলিমকে নিয়ে প্রশ্ন নেই। নানা বিতর্ক সত্ত্বেও তিনি নিঃসন্দেহে রাজনীতিরই মুখ। এমনকি এরশাদ যুগের আলোচিত চরিত্র শেখ শহীদুল ইসলামও রাজনীতি করে উঠে এসেছেন। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস তার নিজগুণেই পরিচিত হয়ে উঠছেন। এবার যখন তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে এলেন, তখন তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। ভোটাররা শিক্ষিত এই তরুণ মুখকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে এনেছেন।

সবমিলিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের পর যে আশার আলো শেখ হাসিনা দেখিয়েছিলেন, সেই আলো ক্রমশ ম্রিয়মান হয়ে উঠছে। চমৎকার সেই সূচনার সঙ্গে এখনকার হিসাব মিলছে না একেবারেই।

উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিতেও প্রায় একই রকমের কাণ্ড ঘটেছে। সাবেক স্পিকার বিএনপি নেতা জমিরউদ্দিন সরকার গত দফায় স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পরই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি আর কখনো নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। কিন্তু ঠিকই দাঁড়ালেন এবার। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও জমিরউদ্দিন সরকার- দুজনই এবার নিজ নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে সাত সমুদ্দুর তের নদী পেরিয়ে বগুড়া গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। এই জায়গায় খালেদা জিয়া আরেকটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। বগুড়ার স্থানীয় অনেক নেতাই গত নির্বাচনে খালেদা জিয়ার জন্য প্রাণপণ খেটেছেন। অথচ উপ-নির্বাচনে তাদের মূল্যায়ন করলেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন।

হায়, বাংলাদেশ!

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): শেখ হাসিনাখালেদা জিয়াশেখ হেলালমওদুদ আহমেদজমিরউদ্দিন সরকারবিএনপিআওয়ামী লীগawami leaguesheikh hasinasheikh helalsheikh selimmoudud ahmedjamiruddin sarkarbnpkhaleda zia ;

প্রথম প্রকাশ

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply