আহা, কবে আসবে মুগ্ধ হওয়ার সেই সময়!

গ্রামীণফোন আসলে কার? নরওয়েজিয়ান কম্পানি টেলিনরের। বাংলালিংক ইজিপশিয়ান কম্পানি ওরাসকমের। একটেল? প্রায় পুরোটাই মালয়েশিয়ান বিনিয়োগ। দুবাই রাজপুত্রের ওয়ারিদের তো জানা কথা। অমিত সম্ভাবনাময় মোবাইল ফোন সেক্টরে বাংলাদেশী কোনো উদ্যোগ নেই। ওয়েবে কি এমন একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের কথা আপনি আমাকে বলতে পারবেন, যা পুরোটাই 'বাংলাদেশী-উদ্যোগ'? ব্লগ-প্ল্যাটফর্মের কথাই ধরুন। আছে কি? আমি অন্তত এমন উদাহরণ পাইনি। অথচ দেখুন, ঘুরেফিরে এই আমরাই বারবার ব্যবহৃত হচ্ছি কর্পোরেটের প্রয়োজনে। তাদের প্রলোভনে মাথা নেড়ে নেড়ে যাচ্ছি কোনো প্রশ্ন ছাড়াই। কর্পোরেটের প্রয়োজনে আমাদের মেধাবী প্রোগ্রামাররা সস্তা শ্রমমূল্যে নিজের শ্রেষ্ঠ সময়টা বিকিয়ে দিচ্ছে। ইউজার কিন্তু সব বাংলাদেশীই, এই আমরাই। ঢাকা থেকে আমি, চট্টগ্রাম থেকে তুমি, নিউইয়র্ক থেকে আমারই বন্ধু, লন্ডন থেকে তোমার ছোট ভাই- সবমিলিয়ে আমরা আমরাই তো! অথচ তারপরও আমাদের নিজস্ব বলতে কিছু নেই। আমাদের একটা সার্চ ইঞ্জিন নেই, ভালো একটা পোর্টাল নেই, এমনকি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগটিও বাংলাদেশীদের নয়। এরপরও বিচ্ছিন্নভাবে কী না হচ্ছে! ভালো ভালো ব্লগার তো আছেই অনেক। ওয়েব প্রোগ্রামিং হোক আর ওয়েব ডিজাইন হোক- আমাদের ছেলেদের প্রতিভার ফুলকি কি দেখছি না অহরহ? পৃথিবীর জটিল ভাষাগুলোর একটি বাংলায় যে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ হচ্ছে, তা তো বাইরে থেকে এসে করে দিয়ে যাচ্ছে না, করছে আমাদের ছেলেরাই। তারপরও আমরা বিচ্ছিন্ন থাকতে পছন্দ করি। আমরা যতো বিচ্ছিন্ন থাকবো, কর্পোরেটের ততোই লাভ। কেউ কর্পোরেটের রক্তচক্ষুর সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করবে, তা হবে না। কর্পোরেট নীতিতে ভিন্নচিন্তা প্রকাশ করাটাই একটি দুঃসাহস। অথচ নরসিংদীর একজনের সঙ্গে সিলেটের আরেকজনের ভাবনায় হয়তো তেমন পার্থক্য নেই। কক্সবাজারের এক তরুণ ভাবছে হয়তো খুলনার আরেকজনের মতোই। ইন্টারনেট, বাংলাদেশে তা যতোই শ্লথগতির হোক না কেন, মিরপুরের মশিউরের সঙ্গে উত্তরার ফখরুলের যোগাযোগ তো হচ্ছেই মিনিটে মিনিটে, ঘরের বাইরে না গিয়েই। ব্যস্ততার মাঝেও আজ দুপুরে মেইল কি পাঠাইনি তোকে, মীম? ঠুনকো অজুহাতের চেয়েও আসল কথা হল, ভাবনাগুলোকে আমরা একত্র করতে পারি না, যূথবদ্ধ হতে পারি না নিজেরা। ঘাটতি যে আমাদের কম নেই, তা নয়। আমাদের তরুণরা যখন একটি পোর্টাল নামায় ওয়েবে, তখন বোঝা যায় সেটা 'পোলাপানের কাজ।' অ্যাজাক্সের মতো ওয়েব-ভাষা এসে যে সাধারণ ওয়েবসাইটগুলোকে আমূল বদলে দিচ্ছে, তারা সেটা জানে, তারা সেটার প্রশংসা করে, কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা নিজেরা তৃতীয় শ্রেণীর ওয়েবসাইটই তৈরি করে। "তারা সিংহের প্রশংসা করে, কিন্তু নিজের জন্য পছন্দ করে একটি গাধা!" স্নিগ্ধ রুচির পরিচয় মেলে না। গোছানো ভাবটা থাকে না। ওয়েবে এই জায়গায় এসে সব বাংলাদেশী উদ্যোগই মার খায়। না বললেও বোঝা যায়, এটা পোলাপানের কাজ। কর্পোরেট-উদ্যোগ ঠিক এর উল্টো। ক্ষতিকর জেনেও আমরা তাদের টোপ গিলতে বাধ্য হই। টোপটাও তারা দৃষ্টিনন্দন করেই তৈরি করে। এই যে, কেনা-বেচা নিয়ে সামহোয়্যার ইন যে নতুন সার্ভিস নিয়ে এল, তা দেখে আমি চমৎকৃত। কিন্তু এই কর্পোরেট-উদ্যোগের সঙ্গে আমি একাত্ম বোধ করি না। আমার মন টানে না কিছূতেই। চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনের নাম কিন্তু গুগল নয়, ইয়াহু বা এমএসএনও নয়, তার নাম বাইডু। প্রায় পুরোটাই স্থানীয় উদ্যোগে তৈরি "বাইডু" ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে ওয়েবে চীনাদের নিজস্বতার প্রতীক। লোভী কর্পোরেটকে তারা ঢুকতে দেয়, কিন্তু তা নিজেদের ভাগটা সবার ওপরে রেখে। আহা, কবে দেখবো, আট-দশজন মেধাবী বাংলাদেশী তরুণের হাতে গড়া বাংলাভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগটি? আহা, একটি বাংলা সার্চ ইঞ্জিন দেখে কবে আসবে মুগ্ধ হওয়ার সেই সময়? 
 
প্রথম প্রকাশ  |  দ্বিতীয় প্রকাশ

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply