গুগল আর্থে একবার অনেক খুঁজেটুজে নৌবাহিনীর ফ্রিগেট খালিদ বিন ওয়ালিদকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি জায়গায় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এর ওপর আমি একটি গুগল ফ্ল্যাগও গেড়ে দিয়েছিলাম। এখনও থাকতে পারে সেই চিহ্ন। সেই ফ্রিগেট এই মুহূর্তে আছে মংলা সমুদ্র বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়া থেকে ১৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের তিনটি জাহাজের অনুপ্রবেশের পর খালিদ বিন ওয়ালিদ ওই জায়গায় অবস্থান নেয়।
ভারতের গোয়ার্তুমি, সংঘাত কি অনিবার্য?
ভারতীয় জাহাজগুলো বঙ্গোপসাগরের যে এলাকায় সিসমিক জরিপ করছে, ওই এলাকাটি বাংলাদেশ ও ভারত দু পক্ষই নিজেদের বলে দাবি করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী জলসীমার বিতর্ক শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষই সেখানে অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করতে পারে না। ভারত সেই আইনকে যে গা করেনি, সেটা বোঝা যায় স্পষ্টই। বৃহস্পতিবার নৌবাহিনীর ফ্রিগেট খালিদ বিন ওয়ালিদ ভারতীয় জাহাজগুলোকে সরে যেতে বলার পর তারা প্রথমে কিছুটা পথ সরে গিয়েছিল। কিন্তু পরে আবার সদর্পে ফিরে আসে এবং এলাকা ছেড়ে চলে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এই ঘটনায় তাদের গোয়ার্তুমিটা টের পাওয়া যায়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি ছাড়া জাহাজগুলো নিশ্চয়ই একটি বিরোধপূর্ণ জায়গায় আসে না। এই মুহূর্তে, মিয়ানমারের ঘটনার মতো কূটনৈতিক উদ্যোগে ঘটনার সুরাহা হলে ভালো। আর যদি না হয়, তাহলে প্রথমেই প্রশ্ন আসে- সীমিত শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের মতো শক্তিশালী সামরিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাবে কিনা। যদি যায় তাহলে কী ঘটতে পারে?
নৌশক্তির তুলনা
বলাবাহূল্য ভারতের নৌশক্তি অকল্পনীয়। ভারতীয় নৌবাহিনীর কেবল জাহাজবহর আর সাবমেরিনের তালিকাটা দেখলেই মাথা ঘুরে ওঠার জোগাড় হয়। সে তুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শক্তি খুবই সামান্য। চুলচেরা হিসেব করলেও শক্তি বলতে দেখা যায় পাঁচটি ফ্রিগেট, ২৪টি পেট্রল ক্রাফটস, পাঁচটি মাইন সুইপার, নয়টি মিসাইল বোট, আটটি টর্পেডো বোট এবং ১২ হাজার ১৫০ নৌসেনা ও কর্মকর্তা। একটি সাবমেরিন কেনা হচ্ছে কেনা হচ্ছে বলে আর কেনা হয়ে ওঠেনি।
মিয়ানমারের অভিজ্ঞতা
গত নভেম্বরে ভারতের মতো একইভাবে মিয়ানমার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রায় ৬০ নটিক্যাল মাইল দূরে তাদের জরিপ জাহাজ পাঠিয়েছিল। বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদের মুখে কয়েকদিন পর জাহাজ সরিয়ে নেয় মিয়ানমার। সেদিনের ঘটনায় মিয়ানমার সীমান্তগুলোতে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ রাইফেলস যথেষ্ট পেশাদারি, যথেষ্ট দৃঢ়তার পরিচয় রেখেছে ঘটনার আগাগোড়া। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাসাকা প্রায় যুদ্ধাবস্থা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় কিছুটা সাফল্য এসেছে বটে, তবে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক শক্তির খুব বেশি পার্থক্য নেই। বরং নানা দিক থেকে শক্তিতে বাংলাদেশই এগিয়ে থাকবে।
ভারতের মাথাব্যথা
ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাওয়ার মতো নিবুর্দ্ধিতা করবে বলে মনে হয় না। প্রথমত গা লাগালাগি প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশে ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে। এই স্বার্থের কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে সংঘাতে যেতে তাদের ভাবতে হবে কমপক্ষে দুবার। দ্বিতীয়ত ভারতকে সারা বছরই বিভিন্ন রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ে তটস্থ থাকতে হয়। তৃতীয়ত দুই বৈরী প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং চীনের কথা সবসময়ই ভারতের ভাবনায় থাকে, থাকতে হয় প্রতিনিয়ত।
স্যালুট!
এই অবস্থায়, দেশে যখন নির্বাচনের ডামাডোল, বঙ্গোপসাগরে খালিদ বিন ওয়ালিদ দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে। নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মেঘলাও বঙ্গোপসাগর ধরে ঘটনাস্থলের দিকে ছুটছে। তাদের জন্য শুভকামনা। স্যালুট!