ইজরায়েল-হামাস বিরোধ : প্রতিবাদ ঢেকে যাচ্ছে বিদ্বেষের অন্ধকারে


নরওয়েভিত্তিক ওয়েবসাইট "বয়কট ইজরায়েল ডট নর"- সাম্প্রতিককালে আমার দেখা একটি ভালোমানের সাইট, যাতে আবেগের চেয়ে যুক্তি কিছুটা হলেও প্রাধান্য পেয়েছে। এই প্রথম আমি একটি ইসলামি ওয়েবসাইট দেখলাম, যেখানে তারা সরাসরি এন্টি-সেমিটিজমের যে কোনো ধরন-রূপের বিরুদ্ধে নিজেদের কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে। ওয়েবসাইটে তারা বলছে, ‌‌আমরা ইহুদিদের (এবং অন্য কোনো ধর্মেরই) বিপক্ষে নই। আমাদের অবস্থান ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইজরায়েলি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে।
ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাতের পর বাংলাদেশেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখেছি, পত্রপত্রিকায় প্রচুর লেখাও পড়েছি- কিন্তু কোথাও এ ধরনের ভাষা কিংবা অবস্থান দেখিনি। বরং লক্ষ্য করেছি, ইজরায়েল-হামাস নিয়ে এ যাবতকালের প্রায় সব লেখাতেই এবং সব ধরনের প্রতিবাদেই ইহুদিবিদ্বেষটাই মূল বিষয়, প্রতিবাদ সেখানে মূখ্য ছিল না।

ইজরায়েলি প্রপাগাণ্ডা সাইটগুলো দেখছিলাম ওয়েব ঘুরে ঘুরে। মাত্র একটি সাইটে বাংলাদেশের নাম পেয়েছি, যাতে এক লাইনে শুধু লেখা আছে- ''বাংলাদেশের ঢাকায় একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।" এবং একে উল্লেখ করা হয়েছে এন্টি-সেমিটিক মুভমেন্ট হিসেবে।
বিস্ময় নিয়ে দেখলাম, ইরান-লেবানন-কেনিয়ায় হিটলারের স্বস্তিকা চিহ্ণ সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রতিবাদ সমাবেশের ছবি ইজরায়েল সমর্থক সাইটগুলোতে শোভা পাচ্ছে। তারা বলছে, বলে বলে সত্য হিসেবে প্রতিষ্টা করছে- বিশ্বের কয়েকটি দেশে প্রতিবাদ সমাবেশের নামে যা কিছু হচ্ছে, তার সবই আসলে এন্টি-সেমিটিক প্রচারণা এবং স্পষ্টতই ইহুদিবিদ্বেষ। ইজরায়েলি প্রপাগান্ডা মেশিনগুলোর পাশাপাশি বিশ্বমিডিয়াও এই বিষয়টিকে হাইলাইট করেছে। এবং এখনো করা হচ্ছে। বোধহয় এইজন্য বিশ্ব মিডিয়ার কোথাও (বলা যায় খুব কম জায়গায়) ফিলিস্তিনিদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতি দেখা যায়নি।
বাংলাদেশেও এই জাতিবিদ্বেষ, আমার ধারণা, ইতিমধ্যে গণহিস্টিরিয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাই ভাবুন- এতো প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পরও কী কারণে বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠ গাজায় গিয়ে পৌঁছায় না? নিজেকে প্রশ্ন করুন- প্রতিবাদ কেন বিদ্বেষের অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে?

এবং ব্লগ...
দিনে দিনে সামহোয়্যার হয়ে উঠেছে এন্টি-সেমিটিক প্রচারণা আর ইহুদি-বিদ্বেষের আখড়া। আমি এরকম প্রচুর উদাহরণ দিতে পারবো, যাতে পরিস্কার বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছুই নেই। সামহোয়্যারইন সংশ্লিষ্টদের এখনই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা দরকার। এটা কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। ব্লগের মতো প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষের ছত্রচ্ছায়ায় একপেশে প্রচারণার ক্ষেত্র হয়ে উঠলে সেটা আর ব্লগ থাকে না।

আমি সতর্ক করতে চাই যে, বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয়টা উপস্থাপিত হচ্ছে জাতিবিদ্বেষী মোল্লারাষ্ট্র হিসেবে। অথবা এমনও বলা যায় যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছাচ্ছে বিশ্বসমাজে। বাকিটা আপনাদের বিবেচনা।

আমার এই লেখার বিরোধিতা করার আগে দয়া করে লেখার মূল ভাবটি বুঝতে চেষ্টা করবেন। পর্যবেক্ষণ হয়তো মামুলি, কিন্তু মন্দ কিছু যে বলিনি, এমনকি স্বধর্মের (মুসলিম) লোকদের বিপক্ষেও যে এ লেখায় কিছু নেই- আমি নিশ্চিত। আপনিও নিশ্চিত থাকবেন আশা করি।

প্রাসঙ্গিক লিংক : এসোসিয়েটেড প্রেসের একটি সংবাদ
ছবির উৎস : এসোসিয়েটেড প্রেস 

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply