বইমেলায় বই বাণিজ্য : বড়ো-মাঝারি-ছোট লেখকদের হাস্যকর কাণ্ডকারখানা

দেশে এখন জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বই লেখকের সংখ্যা। বাংলা ব্লগ চালু হওয়ার পর অনেকে আবার শুধু ব্লগার থাকতে চাইছেন না, তারাও লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে মরিয়া হয়ে উঠছেন। আর ওদিকে বাংলা একাডেমির বইমেলার দিকে তাকালে দেখি, লেখকের ছড়াছড়ি রীতিমতো! মুড়ি-মুড়কির মতো জন্ম নিচ্ছে লেখক। অনেকেই আবার বিরল প্রতিভার অধিকারী - ডান হাতে লিখছেন প্রেমের উপন্যাস, বাম হাতে জীবনঘনিষ্ঠ গল্প, ডান পায়ে রম্যরচনা, বাম পায়ে কবিতা, এমনকি কনুই দিয়ে লিখছেন সায়েন্স ফিকশনও। এই পর্যন্ত হলে ব্যাপারটা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু নিজেদের বই বিক্রির জন্য ছোট-বড়ো-মাঝারি-জনপ্রিয় সব লেখকই পুরো ফেব্রুয়ারিজুড়ে এমন সব কাণ্ডকারখানা করেন, কাছ থেকে দেখে-টেখে শ্রেফ ঘেন্না লাগে!

বড়োদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ এবং তার প্রকাশক অন্যপ্রকাশের মাযহারুল ইসলাম এক্ষেত্রে বেশ কয়েক বছর ধরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। গতবার আমরা দেখেছি, বইমেলা আর নুহাশ পল্লীতে হিমুরূপী ভাড়াটে তরুণদের কাণ্ডকারখানা। বাংলালিংক আবার টাকা দিয়ে সেটা স্পন্সর করেছে। প্রচারণার এমনই মরিয়া ধরন, সুযোগ ও সাধ্য থাকলে এরা সম্ভবত আধা নগ্ন মডেল ভাড়া করে বইয়ের প্রচারণা চালাতেন। অন্যদিকে মাঝারিগোছের লেখকরাও বইমেলায় নিজেদের বই বিক্রির জন্য যা কাণ্ডকারখানা করেন, সত্যিই লজ্জাজনক। নিজেদের বইয়ের প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য তাদের কায়দা-কৌশলের শেষ নেই যেন। বিজ্ঞাপন শুধু প্রকাশকরাই দিচ্ছেন তা নয়, জনপ্রিয় লেখকরা নিজেদের গরজেও বিভিন্ন প্রকাশনীর বই একত্র করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপছেন। সেসব বিজ্ঞাপনে প্রায়ই ভোজবাজির মতো "তিন দিনে তৃতীয় মুদ্রণ" প্রসবিত হচ্ছে। এবং অবধারিতভাবে তাদের প্রতিটি উপন্যাস আর গল্পই "আলোড়ন সৃষ্টিকারী!"

ছোট লেখকদের অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ। অনেককে দেখছি, দিনরাত স্টলের সামনে পড়ে থাকছেন খদ্দের ধরার আশায়। বই পড়িয়েই ছাড়বেন- এমন এক প্রতিজ্ঞা নিয়ে তারা মেলাঙ্গনে মাটি কামড়ে পড়ে থাকছেন। নিজেদের বই বিক্রির জন্য এদের অনেকে পায়ে ধরাটাই শুধু বাকি রাখেন। এদের প্রচার কৌশল আবার ভিন্ন। বইমেলা এলেই তাদের অনেকে হামলে পড়েন ফেসবুক, ব্লগ আর বিভিন্ন ফোরামে। ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ওয়াল, ম্যাসেজ থেকে স্ট্যাটাস - সবখানেই নিজেদের বইয়ের বিজ্ঞাপন, ইনিয়ে-বিনিয়ে, আকারে-ইঙ্গিতে, কখনোবা খোলাখুলিই। রীতিমতো ক্ষ্যাপা কুকুরের অবস্থা। গত বছর থেকে ব্লগে আরেকটি ট্রেণ্ড তৈরি হয়েছে - লোক ভাড়া করে 'আলোচনা' লেখানো। আলোচনা তো নয় ঠিক, ভালোচনা বলাই ভালো। আমাদের সুহৃদ রাসেল (........) এ ধারার পথিকৃৎ। আবার আলোচনার ধার না ধেরে তমুকের বই কিনলাম শীর্ষক মিনি পোস্টও দেখা যাচ্ছে এবার।

বলাবাহূল্য, বইমেলায় প্রকাশিত দুই-তৃতীয়াংশ বই-ই শ্রেফ সময়ের নিদারুণ অপচয়। কাগজের দামের দিকে মানবিক দৃষ্টি রেখে এগুলোকে 'ফর্মা' হয়ে ওঠে, কিন্তু 'বই' কিছুতেই নয়। এমনিতে বই নিয়ে যতো মহতী কথাবার্তা, স্মরণীয় বাণী আছে, সবই কিন্তু বইলেখকদের লেখা। ফলে মাঝে মাঝে সেগুলো পুনর্বিবেচনা করে দেখা ভালো!

সংযুক্তি
বই বিক্রি হচ্ছে নতুন ফর্মূলায়

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): ekushey book fairekushey boi melaboi melabook fairhumayun ahmed ;
প্রথম প্রকাশ

Tags: ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply