শুধু এই একজন নন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়টাতে হাজার হাজার সেনাসদস্যের দিনরাত কেটেছে হয় ভোটার তালিকা তৈরির কাজে, নয়তো জরুরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়, কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় কাজে। সারা দিন ভোটার তালিকার কাজ করে সন্ধ্যায় বাহিনীতে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে তাদের। শুক্র-শনি ভোটার তালিকার কাজ তদারকি করে রোববারেই হয়তো চলে যেতে হয়েছে নিয়মিত ট্রেনিংয়ে। গত কয়েক বছরে হাজার হাজার সৈনিক, আমি নিশ্চিত, রাতের ঘুমটুকুও ঠিকমতো শেষ করতে পারেনি। হায়, তাদের একটি 'ধন্যবাদ' দেওয়া হয়নি।
থানচির দুর্গম পাহাড়ে ভোটার তালিকার কাজে নিযুক্ত ছিল যেসব সৈনিক, তারা জানতো সপ্তাহান্তে ফের আরেকটি হেলিকপ্টারে চাল-ডাল-পানি এসে না পৌঁছুলে না খেয়ে মরে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। তবু তারা কাজ করে গেছে। বাঘাইছড়ির মাচালং পেরিয়ে জনমানবহীন প্রান্তরে দেখেছি, সকাল থেকে সন্ধ্যা ট্রাক্টরের ওপরে বসে নিঃসঙ্গ সৈনিক পাথরসম পাহাড় কেটে জনচলাচলের পথ তৈরি করছে।
অথচ! এই লোকগুলো, আমাদেরই ভাই-প্রতিবেশী-নিকটজন, কখনোই তাদের কাজের জন্য একটি 'ধন্যবাদ' পায় না। তিন যুগেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশ যে প্রকৃতই এক অসামান্য ও নির্ভুল ভোটার তালিকা হাতে পেল, তার পুরো কৃতিত্ব এই সেনাবাহিনীরই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সহযোগী হিসেবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও তাদের বিরুদ্ধে পুকুরচুরির অভিযোগ ওঠেনি। আমরা দেখেছি, কী সচেতনভাবে তারা সংবরণ করেছে ক্ষমতার দুর্দমনীয় লোভ। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর চেয়ে বড়ো কৃতিত্ব আর কী হতে পারে? অথচ, কী অদ্ভূত, বারবার তাদের দিকেই ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে অবিশ্বাসের তীর। হায়, তাদের একটি 'ধন্যবাদ' দেওয়া হয়নি।
দলমতনির্বিশেষে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ এক অবিশ্বাস্য অভিযান চালিয়ে তারা ঝাঁকুনি দিয়েছিল পুরো দেশকে। অথচ বিনিময়ে তাদের বিরুদ্ধে কেবলই শোনা গেছে বিদ্বেষবাণী।
তারা কি দেশপ্রেমিক নয়? তারা আমাদের ভাই-প্রতিবেশী-নিকটজন নয়? নাকি তারা ভিনগ্রহের কেউ?
ছবি : ট্রাক্টরের ওপরে বসে নিঃসঙ্গ সৈনিক পাথরসম পাহাড় কেটে জনচলাচলের পথ তৈরি করছে। পার্বত্য খাগড়াছড়ির ছবি।
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): bangladesh army, bangladesh army, bangladesh military ;
প্রথম প্রকাশ
0 মন্তব্য