আইএনএসআই বিধিমালা
১. জীবন ও নিরাপত্তা বজায় রাখাটা সবার উপরে। কর্মচারী ও ফ্রি-ল্যান্স সবাইকে সমানভাবে সচেতন করতে হবে যে কোন স্টোরি বা রিপোর্টের সন্ধানে কোন অযাচিত ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা দৃঢ়ভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করা হচ্ছে যে তারা যেন কোন প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার চেয়ে নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে বিবেচনা করে।
২. যুদ্ধ কিংবা অন্য কোন বিপজ্জনক এলাকায় অ্যাসাইনমেন্টের কাজের জন্য পাঠানো অবশ্যই স্বেচ্ছাভিত্তিক হতে হবে এবং কেবলমাত্র অভিজ্ঞ সংবাদ সংগ্রহকারী আর যারা তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকবেন তাদের তাতে জড়িত করতে হবে। কোন বিপজ্জনক কাজে না যেতে চাওয়া হলে সেটা ক্যারিয়ার বা চাকরির ভবিষ্যৎ উন্নতির ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না ।
যেসব সম্পাদক দফতরে আছেন কিংবা মাঠপর্যায়ে যে সাংবাদিক আছেন তারা পরস্পরের সাথে উপযুক্ত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবেন যে কখন কোন বিপজ্জনক অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শেষ করে দিতে হবে।
৩. কোন বিপজ্জনক এলাকায় অ্যাসাইনমেন্টে পাঠানোর আগে, সকল সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের কর্মচারীদের অবশ্যই বৈরী পরিবেশ ও ঝুঁকি সচেতনতা সংক্রান্ত উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নিয়োগকারীদের এটা বাধ্যতামূলক করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
৪. অ্যাসাইনমেন্টের কাজে পাঠানোর আগে নিয়োগকারীদের নিশ্চিত করতে হবে যেন সাংবাদিকেরা যে জায়গায় এ্যাসাইনমেন্টের কাজ করতে যাবেন সেখানকার বর্তমান রাজনৈতিক, আঞ্চলিক আর সামাজিক পরিস্থিতি সর্বসাম্প্রতিক অবস্থা কী এবং জেনিভা চুক্তিগুলো আর অন্যান্য প্রধান মানবিক আইন সংক্রান্ত দলিলে সশস্ত্র বিরোধের আন্তর্জাতিক বিধিমালা সম্পর্কে তাদের জানা থাকে।
৫. বিপজ্জনক এলাকায় যে সমস্ত কর্মচারী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের পাঠানো হবে তাদের প্রতি হুমকি মোকাবেলার উদ্দেশ্যে নিয়োগকারীদের অবশ্যই উপযুক্ত ও কার্যকর নিরাপত্তা সরঞ্জাম আর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য রক্ষাকবচগুলো যোগাতে হবে।
৬. সমস্ত সাংবাদিককে বৈরী এলাকায় অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করার সময়ে ইনশিওরেন্স যোগাতে হবে, যার মধ্যে ব্যক্তিগত আঘাত ও মৃত্যুর ঝুঁকিরও বীমা থাকবে। কর্মচারী ও ফ্রি-ল্যান্সের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না।
৭. দুর্দশার ঘটনাবলী সম্পর্কে খবর দিতে জড়িত সাংবাদিকদের গোপনীয় পরামর্শ সেবা পাওয়ার বিনা খরচে সুযোগ নিয়োগকারীদের দিতে হবে। মর্মান্তিক ঘটনার পরবর্তী মানসিক চাপকে ম্যানেজারদের বোঝার জন্য তাদেরকে নিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, আর বিপজ্জনক এলাকায় অবস্থানরত সাংবাদিকদের পরিবারদের তাদের প্রিয়জনদের নিরাপত্তার বিষয়ে সময়মতো পরামর্শ দিতে হবে।
৮. সাংবাদিকেরা নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক। সংবাদমাধ্যমের কোন সদস্যের তাদের অ্যাসাইনমেন্টের কাজের সময়ে কোন আগ্নেয়াস্ত্র সাথে নেওয়া উচিত হবে না।
৯. সরকার এবং সকল সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীকে অনুরোধ করা হচ্ছে তারা যেন তাদের এলাকায় কর্মরত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার কথাটা মনে রাখেন, তা তারা তাদের নিজেদের বাহিনীর সাথে থাকুন বা নাই থাকুন। ওরা সংবাদ মাধ্যমের খবর সংগ্রহ ও বিতরণের অধিকারকে খাটো করা কিংবা তাদের চলাফেরার উপর অহেতুক বিধিনিষেধ আরোপ যেন অবশ্যই না করেন।
১০. নিরাপত্তা বাহিনী যেন সাংবাদিকদের আইনসম্মত অ্যাসাইনমেন্টের কাজের সময়ে কখনোই হয়রানি, ভয় দেখানো কিংবা দৈহিক আক্রমণ না করে।
নিরাপত্তার জন্য ১৬টি পদক্ষেপ
১. দৈহিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন। আপনার অ্যাসাইনমেন্টের কাজে যাওয়ার আগে যদি একান্তই সম্ভব হয় ,তাহলে একটা বৈরী পরিবেশ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে অবশ্যই যান।
২. বেশিরভাগ বিরোধের এলাকায় অন্তত দৌড়ানোর, অনেক দূর হাঁটার আর অ-স্বাচ্ছন্দ্য সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন নিন আর পরিষ্কার সুঁই ও মৌলিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সাথে রাখুন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্রেসলেট পরুন- যার মধ্যে অভয় প্রতীক থাকবে এবং আপনার অ্যালার্জি, রক্তের গ্রুপ ইত্যাদি লিখে সঙ্গে রাখুন।
৩. যে এলাকায় কাজে যাচ্ছেন সেখানকার লোকজন আর জায়গার পটভূমি আর ওই বিরোধ সম্পর্কে পটভূমি জেনে নিন।
স্থানীয় ভাষার কয়েকটা দরকারি কথা শিখে নিন, সবচেয়ে বেশি দরকারি কথাগুলো হচ্ছে ‘ফরেন প্রেস’ অথবা ‘জার্নালিস্ট’। স্থানীয় লোকজনের অঙ্গভঙ্গি, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে সেগুলি জেনে নিন।
৪. বিরোধের এলাকায় ঘোরাঘুরি করবেন না। যদি রাস্তা দিয়ে ভ্রমণ করেন ,তাহলে একটা নিরাপদ ও দায়িত্বশীল ড্রাইভারকে নিন যার স্থানীয় এলাকা ও সম্ভাব্য গোলযোগের জায়গাগুলো সম্বন্ধে জানা আছে। আপনার গাড়িকে মিডিয়া বলে চিহ্নিত করুন যদি তাতে করে আক্রমণের সম্ভাবনা না থাকে। একটা গাড়ির বহরের সাথে ভ্রমণ করুন। যদি কোন নিয়মিত মিলিটারি টহলদলের সাথে ভ্রমণ না করেন তাহলে কোন মিলিটারি কিংবা মিলিটারি মার্কা গাড়ি ব্যবহার করবেন না।
আপনার গাড়িটা ঠিকঠাক চলে কিনা দেখে নিন, সাথে যথেষ্ট তেল নিন। গরম আবহাওয়ায় টায়ারের প্রেসার নিয়মিত মেপে নিন, কারণ টায়ার ফেটে গেলে বিপর্যয় হতে পারে।
৫. ভ্রমণের আগেভাগে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আর বাসিন্দাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। সামনের রাস্তা নিরাপদ আছে কিনা সেটা মাঝেমাঝে জেনে নিন। আপনার হেডকোয়ার্টার আর দফতরের সহযোগীদের জানিয়ে রাখুন আপনি কোথায় যাচ্ছেন, আপনার ভ্রমণসূচি কী আর কখন ফিরে আসার সম্ভাবনা। মাঝেমাঝে নিজের উপস্থিতি জানিয়ে দিন। এমন কোন ম্যাপ নেবেন না যেটা মিলিটারির ম্যাপ বলে মনে হতে পারে।
৬. অপরিচিত যোগাযোগের লোকের সাথে প্রকাশ্য জায়গায় মিলিত হবেন আর আপনার অফিস কিংবা বিশ্বাসী সহকর্মীকে আপনার পরিকল্পনার কথা বলে রাখুন। কোন সম্ভাব্য বিপদের মুখে একলা যাবেন না। কোন বিপজ্জনক এলাকায় প্রবেশের আগে বেরিয়ে আসার একটা দ্রুত ও নিরাপদ উপায়ের পরিকল্পনা করুন।
৭. কখনোই সাথে অস্ত্র রাখবেন না আর যে সাংবাদিকেরা রাখেন তাদের সাথে ভ্রমণ করবেন না। ছবি নেওয়ার ব্যাপারে সতর্কবুদ্ধি অবলম্বন করবেন। ছবি তোলার আগে সৈন্যদের সম্মতি নেবেন। ছবি নেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের আপত্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে জেনে নিন।
৮. সাথে একটা ছবিসহ পরিচিতি রাখুন। সাংবাদিক ছাড়া অন্য কিছু হওয়ার ভান করবেন না। যদি চ্যালেঞ্জ করা হয় তাহলে পরিষ্কারভাবে নিজের পরিচয় দিন। যদি কোন সম্মুখ রণাঙ্গনের দুপাশেই কাজ করেন তাহলে এক পক্ষের খবর অন্য পক্ষের কাছে কখনোই দেবেন না।
৯. সিগারেট আর অন্যান্য উপহার সাথে রাখুন লোকজনকে খুশি করার জন্য। শান্ত থাকুন আর স্বস্তিভাব দেখান যদি সৈন্য কিংবা স্থানীয় লোকজন হুমকি দেওয়ার মতো আচরণ করে। বন্ধুত্বের ভাব দেখিয়ে হাসুন।
১০. জরুরি টাকাপয়সা সাথে রাখুন আর আপনার একটা বাড়তি আইডি বা সনাক্তিপত্র লুকিয়ে রাখুন, যেমন মানি বেল্টের মধ্যে। কিছু টাকাপয়সা দিয়ে দেওয়ার জন্য আলাদা রাখুন।
১১. এমার্জেন্সি ফোন নম্বর কাছে রাখুন, যা স্যাটেলাইট আর মোবাইল ফোনের সাথে প্রোগ্রাম করা, আর স্পিড ডায়ালে একটা কী-তে ২৪/৭ নম্বরটা রেখে দিন। হাসপাতালের অবস্থান আর ওগুলোতে কি রকম সুবিধা-সরঞ্জাম আছে সেটা জেনে নিন।
১২. যেসব অস্ত্রশস্ত্র বিরোধপূর্ণ এলাকায় সাধারণত ব্যবহার করা হয় সেগুলো চিনে রাখুন, ওগুলি কতদূর যায় আর ভেদ করার ক্ষমতা কতখানি তা জেনে নিন যাতে আপনি সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে আশ্রয় নিতে পারেন। বাইরে যাওয়া আর ভেতরে আসার ব্যাপার জেনে নিন। স্থলমাইন আর অন্যান্য গোলাবারুদের চেহারা কি রকম তা জেনে নিন। কোন ফেলে যাওয়া অস্ত্র বা গোলাবারুদ ধরবেন না।
১৩. ওয়ার করেসপন্ডেন্ট বা যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসাবে এক্রিডিটেড বা তালিকাভুক্ত না হলে আর তার জন্য সামরিক পোশাক পরার দরকার না হলে অসামরিক পোশাক পরবেন। প্যারা-মিলিটারি মার্কা পোশাক পরবেন না। চকচকে জিনিস সাথে রাখবেন না আর লেন্স সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন। রোদের আলোর উজ্জ্বল প্রতিফলন কামানের গোলা ছোঁড়ার আলোর চমকের মতো মনে হতে পারে।
১৪. ফ্ল্যাক জ্যাকেট , বর্ডি আর্মার, হেলমেট, গ্যাস মাস্ক আর যেখানে উপযুক্ত হয় এনবিসি-র পোষাক পরার জন্য তৈরী থাকুন। প্রদর্শনীর জন্য, আরো নজরে না পড়ার মতো জিনিসপত্র, যেমন শক্ত হয়ে যাওয়া বেসবল-মার্কা হ্যাট আর হালকা আন্ডারওয়ারের আবরণ বেশি ব্যবহার করুন।
১৫. আপনার অধিকারগুলো জেনে রাখুন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উভয় পর্যায়েই। জেনিভা চুক্তির শর্তগুলো সম্পর্কে জেনে নিন। কারণ সেগুলি যুদ্ধ এলাকায় অসামরিক নাগরিকদের বেলায় প্রযোজ্য।
১৬. যেসব সাংবাদিক দারুণ বিপদের মধ্য দিয়ে গেছেন আর ভয়ঙ্কর ঘটনার দৃশ্য দেখেছেন তাদের পরের সপ্তাহগুলোতে চরম মানসিক চাপ আসতে পারে। এর জন্য পরামর্শ নিতে গিয়ে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই ।
ছবি পরিচিতি
প্রথম ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (এনবিসি) একজন যুদ্ধ-সংবাদদাতার।
দ্বিতীয় ছবিটি ইরাক যুদ্ধ কাভার করা একজন সাংবাদিকের বইয়ের প্রচ্ছদ।
১. দৈহিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন। আপনার অ্যাসাইনমেন্টের কাজে যাওয়ার আগে যদি একান্তই সম্ভব হয় ,তাহলে একটা বৈরী পরিবেশ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে অবশ্যই যান।
২. বেশিরভাগ বিরোধের এলাকায় অন্তত দৌড়ানোর, অনেক দূর হাঁটার আর অ-স্বাচ্ছন্দ্য সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন নিন আর পরিষ্কার সুঁই ও মৌলিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সাথে রাখুন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্রেসলেট পরুন- যার মধ্যে অভয় প্রতীক থাকবে এবং আপনার অ্যালার্জি, রক্তের গ্রুপ ইত্যাদি লিখে সঙ্গে রাখুন।
৩. যে এলাকায় কাজে যাচ্ছেন সেখানকার লোকজন আর জায়গার পটভূমি আর ওই বিরোধ সম্পর্কে পটভূমি জেনে নিন।
স্থানীয় ভাষার কয়েকটা দরকারি কথা শিখে নিন, সবচেয়ে বেশি দরকারি কথাগুলো হচ্ছে ‘ফরেন প্রেস’ অথবা ‘জার্নালিস্ট’। স্থানীয় লোকজনের অঙ্গভঙ্গি, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে সেগুলি জেনে নিন।
৪. বিরোধের এলাকায় ঘোরাঘুরি করবেন না। যদি রাস্তা দিয়ে ভ্রমণ করেন ,তাহলে একটা নিরাপদ ও দায়িত্বশীল ড্রাইভারকে নিন যার স্থানীয় এলাকা ও সম্ভাব্য গোলযোগের জায়গাগুলো সম্বন্ধে জানা আছে। আপনার গাড়িকে মিডিয়া বলে চিহ্নিত করুন যদি তাতে করে আক্রমণের সম্ভাবনা না থাকে। একটা গাড়ির বহরের সাথে ভ্রমণ করুন। যদি কোন নিয়মিত মিলিটারি টহলদলের সাথে ভ্রমণ না করেন তাহলে কোন মিলিটারি কিংবা মিলিটারি মার্কা গাড়ি ব্যবহার করবেন না।
আপনার গাড়িটা ঠিকঠাক চলে কিনা দেখে নিন, সাথে যথেষ্ট তেল নিন। গরম আবহাওয়ায় টায়ারের প্রেসার নিয়মিত মেপে নিন, কারণ টায়ার ফেটে গেলে বিপর্যয় হতে পারে।
৫. ভ্রমণের আগেভাগে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আর বাসিন্দাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। সামনের রাস্তা নিরাপদ আছে কিনা সেটা মাঝেমাঝে জেনে নিন। আপনার হেডকোয়ার্টার আর দফতরের সহযোগীদের জানিয়ে রাখুন আপনি কোথায় যাচ্ছেন, আপনার ভ্রমণসূচি কী আর কখন ফিরে আসার সম্ভাবনা। মাঝেমাঝে নিজের উপস্থিতি জানিয়ে দিন। এমন কোন ম্যাপ নেবেন না যেটা মিলিটারির ম্যাপ বলে মনে হতে পারে।
৬. অপরিচিত যোগাযোগের লোকের সাথে প্রকাশ্য জায়গায় মিলিত হবেন আর আপনার অফিস কিংবা বিশ্বাসী সহকর্মীকে আপনার পরিকল্পনার কথা বলে রাখুন। কোন সম্ভাব্য বিপদের মুখে একলা যাবেন না। কোন বিপজ্জনক এলাকায় প্রবেশের আগে বেরিয়ে আসার একটা দ্রুত ও নিরাপদ উপায়ের পরিকল্পনা করুন।
৭. কখনোই সাথে অস্ত্র রাখবেন না আর যে সাংবাদিকেরা রাখেন তাদের সাথে ভ্রমণ করবেন না। ছবি নেওয়ার ব্যাপারে সতর্কবুদ্ধি অবলম্বন করবেন। ছবি তোলার আগে সৈন্যদের সম্মতি নেবেন। ছবি নেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের আপত্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে জেনে নিন।
৮. সাথে একটা ছবিসহ পরিচিতি রাখুন। সাংবাদিক ছাড়া অন্য কিছু হওয়ার ভান করবেন না। যদি চ্যালেঞ্জ করা হয় তাহলে পরিষ্কারভাবে নিজের পরিচয় দিন। যদি কোন সম্মুখ রণাঙ্গনের দুপাশেই কাজ করেন তাহলে এক পক্ষের খবর অন্য পক্ষের কাছে কখনোই দেবেন না।
৯. সিগারেট আর অন্যান্য উপহার সাথে রাখুন লোকজনকে খুশি করার জন্য। শান্ত থাকুন আর স্বস্তিভাব দেখান যদি সৈন্য কিংবা স্থানীয় লোকজন হুমকি দেওয়ার মতো আচরণ করে। বন্ধুত্বের ভাব দেখিয়ে হাসুন।
১০. জরুরি টাকাপয়সা সাথে রাখুন আর আপনার একটা বাড়তি আইডি বা সনাক্তিপত্র লুকিয়ে রাখুন, যেমন মানি বেল্টের মধ্যে। কিছু টাকাপয়সা দিয়ে দেওয়ার জন্য আলাদা রাখুন।
১১. এমার্জেন্সি ফোন নম্বর কাছে রাখুন, যা স্যাটেলাইট আর মোবাইল ফোনের সাথে প্রোগ্রাম করা, আর স্পিড ডায়ালে একটা কী-তে ২৪/৭ নম্বরটা রেখে দিন। হাসপাতালের অবস্থান আর ওগুলোতে কি রকম সুবিধা-সরঞ্জাম আছে সেটা জেনে নিন।
১২. যেসব অস্ত্রশস্ত্র বিরোধপূর্ণ এলাকায় সাধারণত ব্যবহার করা হয় সেগুলো চিনে রাখুন, ওগুলি কতদূর যায় আর ভেদ করার ক্ষমতা কতখানি তা জেনে নিন যাতে আপনি সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে আশ্রয় নিতে পারেন। বাইরে যাওয়া আর ভেতরে আসার ব্যাপার জেনে নিন। স্থলমাইন আর অন্যান্য গোলাবারুদের চেহারা কি রকম তা জেনে নিন। কোন ফেলে যাওয়া অস্ত্র বা গোলাবারুদ ধরবেন না।
১৩. ওয়ার করেসপন্ডেন্ট বা যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসাবে এক্রিডিটেড বা তালিকাভুক্ত না হলে আর তার জন্য সামরিক পোশাক পরার দরকার না হলে অসামরিক পোশাক পরবেন। প্যারা-মিলিটারি মার্কা পোশাক পরবেন না। চকচকে জিনিস সাথে রাখবেন না আর লেন্স সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন। রোদের আলোর উজ্জ্বল প্রতিফলন কামানের গোলা ছোঁড়ার আলোর চমকের মতো মনে হতে পারে।
১৪. ফ্ল্যাক জ্যাকেট , বর্ডি আর্মার, হেলমেট, গ্যাস মাস্ক আর যেখানে উপযুক্ত হয় এনবিসি-র পোষাক পরার জন্য তৈরী থাকুন। প্রদর্শনীর জন্য, আরো নজরে না পড়ার মতো জিনিসপত্র, যেমন শক্ত হয়ে যাওয়া বেসবল-মার্কা হ্যাট আর হালকা আন্ডারওয়ারের আবরণ বেশি ব্যবহার করুন।
১৫. আপনার অধিকারগুলো জেনে রাখুন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উভয় পর্যায়েই। জেনিভা চুক্তির শর্তগুলো সম্পর্কে জেনে নিন। কারণ সেগুলি যুদ্ধ এলাকায় অসামরিক নাগরিকদের বেলায় প্রযোজ্য।
১৬. যেসব সাংবাদিক দারুণ বিপদের মধ্য দিয়ে গেছেন আর ভয়ঙ্কর ঘটনার দৃশ্য দেখেছেন তাদের পরের সপ্তাহগুলোতে চরম মানসিক চাপ আসতে পারে। এর জন্য পরামর্শ নিতে গিয়ে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই ।
ছবি পরিচিতি
প্রথম ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (এনবিসি) একজন যুদ্ধ-সংবাদদাতার।
দ্বিতীয় ছবিটি ইরাক যুদ্ধ কাভার করা একজন সাংবাদিকের বইয়ের প্রচ্ছদ।
0 মন্তব্য