ছবিতে যে ইউনিফর্মপরা উদ্বিগ্ন মুখটি, এই লোকটি খুনি নন!

ছবিতে ইউনিফর্ম পরা যে মুখটি দেখছেন, আজ তার বেতন পাওয়ার কথা ছিল। ছুটি থেকে তড়িঘড়ি ফিরে তিনি জেনেছেন, তার কিছু সহকর্মীর হাতে ঘটেছে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার ঘটনা। সীমান্তের এই পরীক্ষিত প্রহরী, যিনি তার দীর্ঘজীবন দেশের সীমান্ত পাহারা দিয়ে কাটিয়েছেন, তিনি আজ সারাদিনই উদ্বিগ্নমুখে অপেক্ষা করেছেন- কখন ডাক আসবে। অল্প বেতন নিয়ে এই লোকটি তার জীবনের প্রায় পুরো সময়টায় দেশের জন্য ব্যয় করেছেন। এবং এই লোকটি খুনি নন! পিলখানায় ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড, শতাধিক সেনাকর্মকর্তার নির্মম নিষ্ঠুর মৃত্যুর ঘটনা দেখেও তাই এই লোকটির জন্য কেন যেন মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি লোকটির চেহারা পড়ে বুঝতে পারি, তার পুরো পরিবার আজ তার বেতনের অপেক্ষায় ছিল।

টেলিভিশনে বা সরাসরি অনেকেই দেখে থাকবেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট করার সরকারি নির্দেশের পর গতকাল থেকেই বহু বিডিআর সদস্য পিলখানার সদর দপ্তরের সামনে ভিড় করছেন। ওদিকে বিডিআর বিদ্রোহের আগে ছুটিতে যাওয়া বিডিআর জওয়ানরা ছুটি শেষে কিভাবে আবার চাকরিতে যোগ দেবেন তাও বুঝতে পারছেন না। বিডিআর সদর দফতরের প্রধান গেইটে তাদের দেখা যাচ্ছে উদ্বিগ্ন মুখে অপেক্ষা করছেন। এছাড়া রিপোর্ট করার জন্য সদরদপ্তরের প্রধান ফটকের সামনে এবং ধানমণ্ডির আবাহনী মাঠে অপেক্ষায় করছেন কয়েক হাজার বিডিআর সদস্য। পিলখানার হাসপাতাল ভবনে পাঁচ শতাধিক বিডিআর সদস্য আটক অবস্থায় আছেন। সেখানে কিছু নারী ও শিশুও রয়েছেন। এদের অনেকেই পিলখানায় গত বুধবার সকালে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পালিয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার হত্যাকাণ্ড শুরু হওয়ার পর পালিয়ে যান। অনেকে ছুটিতে ছিলেন। ওরা দোষী নয়। ডিজিএফআই প্রধানও সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিদ্রোহের সঙ্গে বিডিআরদের সবাই ছিল না। তিনি বলেছেন, "সংখ্যাটি খুব সম্ভবত অল্পই হবে।" কিন্তু যেহেতু পুরো জাতির মনেই বিডিআর সদস্যদের প্রতি একটি অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে, ফলে নির্দোষ যারা, তাদেরও অনিবার্যভাবেই ভুগতে হচ্ছে।

সীমান্ত আছে স্পর্শকাতর অবস্থায়। আমি শুধু ভয় পাচ্ছি, নির্দোষ বিডিআরদের মধ্যে আস্থার অভাব সৃষ্টি না হয়। এবং সেই অনাস্থা নিয়ে যেন তাদের সীমান্তে দায়িত্ব পালন করতে না হয়। মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র সীমান্ত রক্ষার জন্যই বিডিআর সদস্যদের বিশেষভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে। এই কাজ পুলিশকে দিয়ে হবে না। তবে বিডিআরের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইনুল হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন, বিদ্রোহের পর জওয়ানদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে।

বিদ্রোহী বিডিআরদের মধ্যে যারা দোষী, যারা মূল হোতা, ব্যক্তিগতভাবে আমি এমনকি তাদের বিচারের পক্ষেও নই। ইতিমধ্যে সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, এমনকি সরকারেরও নিশ্চয়ই ধারণা হয়ে গেছে, হাজার হাজার বিডিআর সদস্যের মধ্যে কারা কারা মূল হোতা, কারা কারা দোষী। এদের সরাসরি ফায়ারিং রেঞ্জেই নেওয়া উচিত। সেনাকর্মকর্তাদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কিছুতেই পূরণ হবে না। এ ক্ষতি অবর্ণনীয়। তবে এই ক্ষতি, এই ব্যথা মনে রেখেও নির্দোষ বিডিআর সদস্যদের জন্য একটু মানবিকতা রাখতেই চাই। আসলে রাখা-না রাখা ঠিক নয়, আজ পিলখানার গেট থেকে ঘুরে এসে, আবাহনী মাঠের ওপর চোখ রেখে সেটা কেমন করে যেন সঙ্গোপনে জমা হয়ে গেল!

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): bdr mutinybangladesh rifles revoltbangladesh riflesbdr mutiny day ;

প্রথম প্রকাশ

Tags: , ,

About author

ফিউশন ফাইভ। ব্লগ লিখছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

0 মন্তব্য

Leave a Reply